শীতের পিঠা: সহজে বানানোর ১০টি ঘরোয়া রেসিপি
বাংলার শীত মানেই পিঠার উৎসব। গ্রাম থেকে শহর—সব জায়গায় শীতের আমেজ যেন আরও বেড়ে যায় নানান স্বাদের পিঠা দিয়ে। চালের গুঁড়া, নারকেল এবং খেজুরের গুড়ের সুগন্ধে ভরে ওঠে ঘর। এই আর্টিকেলে শীতের ১০টি জনপ্রিয় পিঠার রেসিপি তুলে ধরা হলো, যা সহজ উপকরণে ঘরেই তৈরি করতে পারবেন।
শীতে পিঠা শুধু স্বাদের নয়, এটি বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের নিয়ে পিঠা বানানো এবং খাওয়ার আনন্দ শীতকে আরও বিশেষ করে তোলে। নিচে আপনি ধাপে ধাপে শীতের সেরা পিঠা বানানোর পদ্ধতি শিখে নিতে পারবেন।
ভূমিকা
ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। এই ছয় ঋতুর মধ্যে শীতকাল তার বৈচিত্র্যের জন্য খুব পরিচিত। শীতে পিঠা তৈরির কারণে ঘরে ঘরে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যায় সবাই একসাথে বসে পিঠা খাওয়ার আনন্দ শীতকে আরো বিশেষ করে তুলে। তাই বলা যায়, শীতের আগমন পিঠার উৎসবমুখর সাংস্কৃতিক পরিচয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
শীতের পিঠার জনপ্রিয়তা ও ঐতিহ্য
শীত এলেই বাঙালিদের পিঠার কথা মনে পড়ে যায়। শীতের পিঠার জনপ্রিয়তা গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কৃষিভিত্তিক সমাজে শীতকাল মানেই নবান্ন উৎসব। কৃষকেরা নতুন ধান ঘরে তুলে। আর সেই ধান থেকেই তৈরি হয় শীতের মজাদার সব পিঠাপুলি। বাঙালির ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন অটুট রাখার জন্য শীতের পিঠার বিকল্প নেই। এ সময় গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠা বানানোর ব্যস্ততা। চালের আটা, খেজুরের গুড়, নারকেলের দুধ ইত্যাদি দেশজ উপাদানে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের পিঠা।
যেগুলো বাঙালির স্বাদ ও ঐতিহ্যকে ভিন্ন রূপে প্রকাশ করে। শীতের রাতে যখন সবাই এক সাথে বসে পিঠা বানায় তখন সবার মধ্যে আন্তরিক পরিবেশ তৈরি হয়। গল্প ও হাসি আড্ডার মিলনমেলায় পিঠা হয়ে ওঠে সাংস্কৃতিক এক অভিজ্ঞতা। শীতকালে বিভিন্ন স্থানে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। যা নতুন প্রজন্মকে বাঙালির ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করায়। যদিও আধুনিক রান্না-বান্নার পদ্ধতি পিঠাকে আরো এগিয়ে দিয়েছে তবুও মূল ঐতিহ্যিক রূপ এখনো বজায় আছে। পিঠা আমাদের অতীতের সাথে বর্তমানের যোগসূত্র তৈরি করে দেয় এবং শীতকে করে তুলে আরও প্রাণবন্ত ও রঙিন।
পিঠা বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ
পিঠা বানানোর মূল উপকরণ হলো চালের আটা। এতে মিষ্টত্ব আনার জন্য চিনি বা গুড় যোগ করা হয়। আর নারকেল পিঠার পুর তৈরি ও স্বাদ বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। চালের গুঁড়া পিঠার মূল কাঠামো তৈরি করে। পানির সঙ্গে চালের গুঁড়া মিশিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠার মিশ্রণ তৈরি করা হয়। অনেক পিঠা আবার দুধ দিয়ে বানানো হয়। দুধের তৈরি পিঠাগুলো অনেক সুস্বাদু ও মোলায়েম হয়ে থাকে। তেলে বা ঘি দিয়ে ভেজে তৈরি করা পিঠাগুলোও খেতে খুব ভালো হয়।
কিছু পিঠা তৈরির ক্ষেত্রে আটার সাথে সামান্য লবণ ব্যবহার করা হয় যাতে স্বাদের ভারসাম্য ঠিক থাকে। পিঠায় নারকেল কোরা ব্যবহারের ফলে পিঠা আরো সুগন্ধি ও সুস্বাদুতে ভরপুর হয়ে ওঠে। সুতরাং বলা যায় যে, বিভিন্ন ধরনের পিঠা বানানোর প্রয়োজনীয় উপকরণ আলাদা হলেও চালের আটা, গুড়, দুধ, নারকেল, তেল এগুলোই থাকে পিঠা তৈরির মূল উপাদান।
চালের গুঁড়া ও আটা প্রস্তুত করার পদ্ধতি
পিঠার জন্য চালের গুঁড়া ও আটা প্রস্তুত করতে সর্বপ্রথম ভালো মানের চাল নির্বাচন করতে হবে। সব ধরনের পিঠা তৈরিতে সাধারণত সাদা চাল ব্যবহার করা হয়। আবার, মিষ্টি পিঠার জন্য প্রয়োজন হলে মিষ্টি চালও ব্যবহার করা যায়। চাল ভালোভাবে ধুয়ে রাতভর ভিজিয়ে নরম করে নিতে হয়। অতঃপর ভেজানো চাল থেকে পানি ঝরিয়ে নেওয়ার পর পেষণ বা গ্রাইন্ডার করে চাল গুঁড়ো করে নেওয়া হয়। পিঠার ধরণ অনুযায়ী চালকে মিহি বা মোটা করে গুঁড়ো করে নেওয়া যেতে পারে। কিছু বিশেষ ধরনের পিঠা তৈরিতে এই গুঁড়ো হালকা ভাপে নরম করে মন্ডের মতো করে মাখা হয় যা পিঠাকে আরো নরম করে তুলে।
আবার অনেক পিঠার ক্ষেত্রে গুঁড়া অতিরিক্ত আঠালো হওয়া উচিত নয়। কারণ, এতে পিঠার স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হতে পারে। প্রস্তুত চালের আটা তাৎক্ষণিক ব্যবহার না করলে রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করা যায় অথবা দীর্ঘদিনের জন্য ফ্রিজে রাখা সবচেয়ে উপযুক্ত। এতে ফাঙ্গাস বা পোকা-মাকড় হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। তাই, ভালো মানের চাল, সঠিকভাবে ভেজানো ও পেষণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে পিঠার জন্য চালের আটা সহজেই প্রস্তুত করা যায়।
গুড় ও নারকেল প্রস্তুতের সহজ ধাপ
পিঠা তৈরির ক্ষেত্রে গুড় ও নারকেল খুব প্রয়োজনীয় উপকরণ। পিঠার পুর তৈরি করার জন্য প্রথমে নারকেল কোরা প্রস্তুত করা হয়। আবার বাজারের শুকনা কোরানো নারকেলও ব্যবহার করা যায়। তবে তাজা নারকেল হলে চেপে অতিরিক্ত পানি বের করে নিতে হবে। যাতে গুড়ের সাথে মিশানোর পর মিশ্রণ থেকে পানি বের না হয়। এরপর, শক্ত গুড়কে গলানোর জন্য প্রয়োজনে ২-৩ চামুচ পানি যোগ করা যায়।
গলানো গুড়ে কোরা নারকেল ঢেলে অল্প আঁচে রান্না করতে হবে। মিশ্রণটি ঘন হয়ে যাওয়ার পর যখন খুন্তি দিয়ে নাড়লে প্যানের তলা থেকে উঠে আসবে তখন বুঝে নিতে হবে পুরটি পুরোপুরিভাবে তৈরি হয়ে গেছে। অতঃপর পুরের ঘ্রাণ ও স্বাদ বৃদ্ধির জন্য ইচ্ছে অনুযায়ী ঘি, অথবা এলাচ গুঁড়োও মেশানো যায়। সবশেষে পুরটি ঠান্ডা হওয়ার জন্য একটি প্লেটে তুলে রাখতে হবে। পুরটি ঠান্ডা হওয়ার সাথে সাথে শক্ত হতে শুরু করবে আর সেটি পিঠার পুর হিসাবে ব্যবহারযোগ্য হবে।
চিতই পিঠা বানানোর সহজ রেসিপি
ঘরে থাকা অল্প উপকরণের মাধ্যমে চিতই পিঠা সহজেই তৈরি করা যায়। শুরুতে চালের আটার সঙ্গে লবণ মিশিয়ে ধীরে ধীরে পানি যোগ করে মাঝারি ঘনত্বের একটি ব্যাটার তৈরি করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে পানির পরিমাণ যেন খুব বেশি না হয়ে যায়। পানির পরিমাণ কম হলে ব্যাটার ঘন হয়ে পিঠা শক্ত হতে পারে। আবার বেশি হলে পিঠা সঠিকভাবে আকার নেয় না। ব্যাটার তৈরির পরে এটিকে কিছু সময়ের জন্য ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখে দিলে আরও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
এরপর পিঠার হাঁড়ি গরম করে নিতে হবে। হাঁড়ি গরম হয়ে গেলে তৈরিকৃত ব্যাটার ঢেলে দিতে হবে এবং ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। অতঃপর ব্যাটার আপনা-আপনি চারপাশে ছড়িয়ে গোল আকার ধারণ করবে। এটি ৩-৪ মিনিটের মধ্যে ফুলে ওঠে এবং উপরের অংশ শুকিয়ে যায়। তখনই বোঝা যায়, পিঠা সম্পূর্ণভাবে তৈরি হয়ে গেছে। চিতই পিঠাকে উল্টে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না কারন এটি এক পাশ থেকেই সম্পূর্নভাবে তৈরি হয়ে যায়। এভাবেই খুব সহজেই সুস্বাদু চিতই পিঠা তৈরি করা যায়।
ভাপা পিঠা তৈরির পদ্ধতি
ভাপা পিঠা হলো শীতকালীন পিঠার মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি খুব সুস্বাদু একটি পিঠা। ভাপা পিঠা তৈরির জন্য প্রথমে চালের গুঁড়ার সাথে সামান্য লবণ যোগ করে কুসুম গরম পানির সাহায্যে মেখে ঝরঝরে একটি মিশ্রণ প্রস্তুত করা হয়। চাইলে এই মিশ্রণের মধ্যে নারকেলের দুধও ব্যবহার করা যায়। এই ধাপ পিঠার নরমত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করে। এরপর কোরানো নারকেল, গুড় বা চিনি, এক চিমটি লবণ একসাথে মিশিয়ে পুর তৈরি করা হয়।
এবার পিঠা বানানোর জন্য একটি পরিষ্কার কাপড়, ছোট ছাকনি বা পিঠা বানানোর ছাচে চালের গুঁড়ার মিশ্রণ বিছিয়ে এর মধ্যে পুর ভরে দিয়ে তার উপর চালের আটার মিশ্রণ ছড়িয়ে দিতে হয়। অতঃপর এটি ৩-৪ মিনিটের জন্য সেদ্ধ করতে হয়। পিঠা ফুলে নরম হয়ে গেলে ভাপ থেকে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করা হয়। আর এভাবেই তৈরি হয় মজাদার ভাপা পিঠা।
পাটিসাপটা পিঠা বানানোর ধাপ
পাটিসাপটা পিঠার জন্য উপকরণ হিসাবে চালের গুঁড়া, নারকেল কোরা, চিনি, দুধ ও পানির প্রয়োজন হয়। শুরুতে চালের আটা একটি বাটিতে নিয়ে এতে সামান্য লবণ মিশিয়ে পরিমাণ মতো পানি যোগ করে একটি পাতলা লিকুইড তৈরি করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে তৈরিকৃত ব্যাটার যেনো খুব বেশি ঘন আবার খুব বেশি পাতলা না হয়ে যায়। এরপর একটি প্যানে তৈরি লিকুইড সামান্য পরিমাণে ঢেলে দিতে হবে যেনো এটি চারদিকে ছড়িয়ে বড় বৃত্তাকারের সমান হয়।
এটি সিদ্ধ হওয়ার জন্য মধ্যম আঁচে তাপ দিতে হবে। পিঠার উপর যখন স্বচ্ছ ভাব দেখা যাবে তখন বুঝতে হবে এটি সিদ্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে, পিঠা ভরাটের জন্য নারকেল কোরা, দুধ, গুড় একত্রে মিশিয়ে পুর তৈরি করতে হবে। এরপর তৈরি পুর পিঠার মাঝখানে সমানভাবে রেখে রোল আকারে করে নিতে হবে। যেন পুরটি ভিতরে দেখা না যায়। পিঠা ভাপা হয়ে গেলে এটি গরম গরম পরিবেশন করা যায়। এভাবেই তৈরি হয় পাটিসাপটা পিঠা।
দুধচিটা পিঠা রেসিপি
দুধচিটা পিঠা বানানোর জন্য প্রয়োজন ছোট দানার চাল। প্রথমত চালকে ভিজিয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হয়। এরপর চাল বাতাসে বা ছায়ায় শুষ্ক করে নিতে হবে। এরপর চালকে ভালোভাবে গুঁড়ো করে এতে পরিমাণ মতো পানি ও দুধ মিশিয়ে পাতলা ব্যাটার তৈরি করতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে যেন ব্যাটার বেশি ঘন ও বেশি পাতলা যেন না হয়। এতে পিঠার সামঞ্জস্যতা বজায় থাকবে।
এবার একটি নন-স্টিকের প্যানে তেল ব্রাশ করে এতে তৈরিকৃত ব্যাটার সামান্য পরিমাণ ঢেলে দিয়ে চারদিকে পাতলা করে ছড়িয়ে দিতে হবে। এরপর পিঠা উভয়দিকে সেঁকে নিতে হবে। অন্যদিকে, আলাদা করে দুধ, চিনি ও এলাচ গুঁড়া হালকা জ্বাল করে রাখতে হবে। পরিশেষে সবগুলো পিঠা তৈরি হয়ে গেলে গরম দুধে পিঠাগুলো কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয় যাতে পিঠার সাথে দুধ ভালোভাবে মিশতে পারে। দুধ ঠান্ডা হয়ে আসলে পিঠা পরিবেশনের জন্য উপযোগী হয়। আর এভাবেই তৈরি করা হয় দুধচিটা রেসিপি।
সেমাই পিঠা তৈরির উপায়
সেমাই পিঠা তৈরির জন্য উপকরণ হলো মসৃণ সেমাই। প্রথমে সেমাইকে হালকা ঘি দিয়ে ভাজতে হবে। সেমাইকে ততক্ষণ পর্যন্ত ভাজতে হবে যতক্ষণ না বাদামি রং ধারণ করে। সেমাই ভাজা হয়ে গেলে ঠান্ডা করার জন্য রেখে দিতে হবে। এবার অন্য একটি পাত্রে দুধ ও চিনি একসাথে মিশিয়ে ভালোভাবে দ্রবীভূত করতে হবে। সুগন্ধ বাড়ানোর জন্য চাইলে এলাচ গুঁড়া ব্যবহার করা যায়। এরপর ভাজা সেমাই দুধের সঙ্গে অল্প আঁচে রান্না করতে হবে। এতে স্বাদ বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনে কিশমিশ, নারকেল কোরা, কাজু বাদাম ব্যবহার করা যেতে পারে। সবশেষে সেমাই পিঠা চুলা থেকে নামিয়ে হালকা গরম বা ঠান্ডা অবস্থায় পরিবেশন করা যায়।
নারিকেল পুলি পিঠা রেসিপি
নারকেল পুলি পিঠা তৈরির জন্য নারকেল, আটা, চিনি, লবণ ও পানির প্রয়োজন। শুরুতে আটাতে সামান্য লবণ মিশিয়ে কুসুম গরম পানির সাহায্যে একটি নরম ডো তৈরি করতে হবে। ডো তৈরি করার আগে আটাকে ছেকে নিতে হবে। এতে ডো মসৃণ হয়। খেয়াল রাখতে হবে, ডো যেন খুব বেশি শক্ত আবার খুব বেশি নরম হয়ে না যায়। ডো তৈরির পর আধা ঘণ্টার জন্য ঢেকে রেখে দেয়া ভালো এতে আটা ভালোভাবে সেট হয়ে যায়।
এরপর কোরানো নারকেল ও চিনি যোগ করে একটি মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। অতঃপর ডো থেকে ছোট ছোট বল তৈরি করে হাতের সাহায্যে পিঠার আকার দিতে হবে এবং পিঠার ভেতর নারকেল ও চিনির মিশ্রণটি ভরতে হবে। সবগুলো পিঠা বানানো হয়ে গেলে পিঠাগুলো ভাপে সিদ্ধ করে নিতে হবে। পিঠা সিদ্ধ হওয়ার পর সুগন্ধে ভরপুর ও সাদা চকচকে রং ধারণ করবে। এরপর নামিয়ে নিয়ে গরম গরম পরিবেশন করা যায়।
ভাজা পুলি পিঠা
ভাজা পুলি পিঠা চালের গুঁড়ায় তৈরি নরম খোলের ভিতর নারকেল, গুড় বা চিনির মিষ্টি পুর ভরে তৈরি করা হয়। এরপর তৈরি পিঠা তেলে ভাজতে হয় যেন বাহিরে হয়ে ওঠে খসখসে ও ভিতরটা নরম ও মিষ্টি। এই পিঠা অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন উৎসবেও পরিবেশন করা যায়।
পাকন পিঠা বানানোর পদ্ধতি
পাকন পিঠা চালের গুঁড়া, চিনি ও পানি দিয়ে তৈরি এক ধরনের মিষ্টি পিঠা। প্রথমে আলাদা করে চিনি ও পানি নিয়ে চুলায় জ্বাল দিয়ে হালকা ঘন একটি সিরা তৈরি করতে হবে। অন্য একটি পাত্রে চালের গুঁড়ার সঙ্গে সামান্য লবণ ও তেল মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর গরম পানি বা খুব হালকা সিরা দিয়ে নেড়ে মাঝারি ঘন একটি ডো তৈরি করতে হবে। এরপর ডো থেকে ছোট ছোট অংশ কেটে লম্বা করে দড়ির মতো আকৃতি বানাতে হবে এবং পছন্দমতো নকশা করে পাকন আকারে গড়ে নিতে হবে। তৈরি করা পিঠাগুলো মাঝারি আঁচে ভাজতে হবে সোনালি রং আসা পর্যন্ত। ভাজা পিঠা গরম সিরার মধ্যে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রেখে তুলে নিলেই তৈরি হয়ে যায় সুস্বাদু পাকন পিঠা।
তেলের পিঠা (গুড় দিয়ে)
গুড় দিয়ে তৈরি তেলের পিঠা বাঙালিদের কাছে জনপ্রিয় একটি খাবার। শুরুতে গরম পানি দিয়ে গুড় ভালভাবে গলিয়ে নিতে হবে। তারপর, একটি পাত্রে চালের আটা ছেকে নিয়ে তাতে সামান্য লবণ ও গলিয়ে রাখা গুড়ের সিরা অল্প অল্প করে মিশিয় নরম খামির তৈরি করতে হবে। তৈরিকৃত খামির খুব বেশি নরম বা খুব শক্ত করা যাবে না। অতঃপর প্রস্তুত খামির কিছুক্ষণের জন্য ঢেকে রেখে দিতে হবে। এখন কাড়াইয়ে পরিমাণমতো তেল গরম করে অল্প অল্প ঘোলা ঢেলে দিতে হবে। এভাবে পিঠাগুলো অল্প আঁচে ভেজে নিতে হবে। পিঠা সোনালী রং ধারণ করলে চুলা থেকে নামালেই তৈরি হয়ে যায় তেলের পিঠা।
নকশি পিঠা তৈরির সহজ কৌশল
নকশি পিঠা তৈরি করতে প্রথমে চালের আটা, নারকেল, চিনি ও পানি মিশিয়ে একটি নরম মিহি মিশ্রণ তৈরি করতে হয়। এরপর পিঠার আকৃতি দেওয়ার জন্য নকশি মোল্ড হালকা ভিজিয়ে এতে মিশ্রণ দিতে হবে। মোল্ডটি ভরে দেওয়ার পর এটি স্টিমারে ভাপিয়ে নিতে হয়। ভাপানো হয়ে গেলে পিঠা ঠান্ডা হওয়া অবধি অপেক্ষা করতে হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলে পিঠা সহজেই মোল্ড থেকে বের করা যায়। শেষ ধাপে পিঠার উপর নারকেল কুঁচি বা চিনি ছিটিয়ে পরিবেশন করা হয়ে থাকে।
শীতের পিঠা সংরক্ষণ করার টিপস
শীতের পিঠা সংরক্ষণের জন্য কিছু টিপস মেনে চললে পিঠার স্বাদ ও গুণগত মান ধরে রাখা সম্ভব। পিঠার ধরণ অনুযায়ী সংরক্ষণের কৌশলও ভিন্ন হয়। যেমন, ভাপা পিঠা বা নাড়ু বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না। এগুলো বড়জোর ৩-৪ দিন ভালো থাকে। তবে ফ্রিজের ফ্রিজার অংশে রাখলে এক মাসের মতো ভালো থাকে। দুধ জাতীয় পিঠা এক-দুই দিনের মধ্যে খাওয়া উচিত। ফ্রিজে সংরক্ষণ করলে এটি ২-৩ দিনের মতো ভালো থাকে।
অন্যদিকে ঘরের তাপমাত্রায় পিঠা সংরক্ষণ করতে চাইলে কন্টেইনার ব্যবহার করা উচিত এবং সরাসরি আলো থেকে দূরে রাখতে হবে। আবার, তেলের পিঠা ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে চাইলে পিঠা ভালোভাবে ঠান্ডা হয়েছে কি না তা দেখে নিতে হবে। একবার গরম করা পিঠা ফ্রিজে সংরক্ষণ করা সঠিক নয়। তাই সংরক্ষিত পিঠা ছোট ছোট প্যাকেট করে ফ্রিজে রাখা ভালো। সুতরাং, সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতি মানলে পিঠার স্বাদ ও গুণগত মান বজায় থাকে।
উপসংহার
শীতকালীন পিঠা আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে খুব গভীরভাবে জরিয়ে আছে। পিঠা কেবল একটি খবার নয় বরং আমাদের ঐতিহ্য ও পারিবারিক বন্ধনের প্রতীক। শীতের রাতে পিঠা খাওয়ার আনন্দ যেমন মনকে উষ্ণ রাখে তেমনি আমাদের প্রাচীন রন্ধনপ্রনালীকেও জীবিত রাখে। তাই বলা যায় যে, শীতের পিঠা শুধু মুখে লেগে থাকা স্বাদ নয় বরং হৃদয় ছুয়ে যাওয়া এক স্নিগ্ধ অনুভূতি।
এরকম আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে নিয়মিত ভিজিট করুন Freelancing Express Institute ওয়েবসাইট।
ফ্রিল্যান্সিং এক্সপ্রেস ইন্সটিটিউটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url