বাতের ব্যথা থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া সহজ ও নিরাপদ চিকিৎসা
ভুমিকা
আমাদের দেশের একটি প্রচলিত স্বাস্থ্য সমস্যা হলো বাতের ব্যথা, যা অনেকেই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনুভব করেন। তবে আজকাল এই ব্যথা শুধু প্রবীণদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; অল্প বয়সীরাও নানা কারণে বাতের সমস্যায় ভুগছেন। হাঁটুর জয়েন্ট, কোমর, কাঁধ কিংবা হাত-পায়ের জয়েন্টে ব্যথা হওয়া বাতের সাধারণ উপসর্গ। এই সমস্যা প্রাথমিকভাবে সামান্য ব্যথা দিয়ে শুরু হলেও সময়মতো চিকিৎসা না হলে তা দীর্ঘমেয়াদী যন্ত্রণায় পরিণত হতে পারে।
বাত কেন হয় এবং কোন বয়সে বেশি হয়?
(আর্থ্রাইটিস) বা বাতের ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং এটি সব বয়সী মানুষের হতে পারে, তবে সাধারণত মধ্যবয়সী এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে শুরু হতে পারে।
বাত সাধারণত কোন অংশে বেশি হয়?
- হাঁটু: বাতের ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ স্থান হলো হাঁটু। বিশেষ করে ওজনাধিক্য, বার্ধক্য, এবং দীর্ঘদিন হাঁটা বা দাঁড়িয়ে কাজ করার কারণে হাঁটুতে বাতজনিত ব্যথা বেশি হয়। এটি হাঁটাচলা ও সিঁড়ি ভাঙার ক্ষেত্রে কষ্ট সৃষ্টি করে।
- কোমর: বাতের একটা লক্ষন হলো কোমরের নিচের অংশে বা লোয়ার ব্যাকে ব্যথা হওয়া। এটি সাধারণত স্পন্ডিলোসিস বা ডিস্কজনিত কারণে হতে পারে, যা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোমোরের হাড়ের ক্ষয়ে জন্ম নেয়।
- হাত: হাতের কবজি, আঙুল ও কাঁধের জয়েন্টেও বাতের ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে যারা নিয়মিত টাইপিং করেন, বা হাতে বেশি কাজ করেন, তাদের মাঝে এই ধরনের ব্যথা বেশি দেখা যায়।
ঘরোয়া চিকিৎসা এখনো কেন জনপ্রিয়?
- সহজলভ্যতা: সব থেকে সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী চিকিৎসা হলো ঘরোয়া চিকিৎসা।প্রতিটি বাড়িতেই পাওয়া যায় এমন উপাদান হলো আদা, হলুদ, লেবু, রসুন বা সরিষার তেল।এগুলো দিয়ে তৈরি তেল ম্যাসাজ, গরম পানির সেঁক বা হারবাল পেস্ট প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম: ঘরোয়া চিকিৎসায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। ঘরোয়া চিকিৎসা তে গ্যাস্ট্রিক, কিডনি সমস্যা বা অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে না,কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা তে এরকম সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- বিশ্বাস: বয়স্করা সাধারণত প্রাকৃতিক বা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার প্রতি বেশি আস্থা রাখেন।দেহের ভারসাম্য রক্ষা করতে ঘরোয়া পদ্ধতি বেশি কার্যকর বলে মনে করেন বয়স্ক লোকেরা। সব মিলিয়ে, ঘরোয়া চিকিৎসা বাতের ব্যথা কমাতে একটি জনপ্রিয় ও প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
বাতের ব্যথার কারণ
বয়সজনিত হাড়ের ক্ষয়ঃ
বাতের ব্যথার একটা গুরুত্বপূর্ণ কারন হলো এই ক্ষয় যার প্রক্রিয়ায় হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় এবং হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। বয়স বাড়লে শরীরে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-র পরিমাণ কমে যেতে থাকে। ফলে হাড়ের জোড়াগুলোতে ঘর্ষণ বেড়ে যায় এবং সেখান থেকে শুরু হয় ব্যথা, ফুলে যাওয়া ও চলাফেরায় অসুবিধা। হাঁটু, কোমর ও আঙুলের জয়েন্টে বিশেষ করে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। নারীদের ক্ষেত্রে মেনোপজের পর এই ক্ষয় আরও দ্রুত হয়। এ কারণে তারা বাতজনিত ব্যথায় বেশি ভোগেন। হাড় ক্ষয়ের ফলে শুধু ব্যথা নয়, হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। এই সমস্যা প্রতিরোধে নিয়মিত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ, হালকা ব্যায়াম, সূর্যের আলোতে থাকা, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ জরুরি। বয়সজনিত হাড়ের ক্ষয়কে উপেক্ষা করলে তা বাতের ব্যথাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে, তাই সচেতনতা এবং আগেভাগে প্রতিরোধই হচ্ছে মূল চাবিকাঠি।
ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়াঃ
মূলত রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার বিশেষ ধরন হলো গাউট।যখন রক্তে অতিরিক্ত ইউরিক এসিড জমে যায়, তখন তা স্ফটিক আকারে গাঁটে জমা হতে শুরু করে। এর ফলে গাঁট ফুলে যায়, লাল হয়ে যায় এবং তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে পায়ের আঙুল, গোড়ালি, হাঁটু ও কবজিতে। এই ব্যথা হঠাৎ শুরু হয় এবং খুব কষ্টদায়ক হয়। রাত্রে ঘুমের মধ্যে এই ব্যথা বেশি শুরু হতে পারে। উচ্চ প্রোটিনজাত খাবার (যেমন: লাল মাংস, কলিজা, সামুদ্রিক মাছ)যা ইউরিক এসিড বাড়ার অন্যতম কারন। অতিরিক্ত মদ্যপান, স্থূলতা এবং পানি কম পান করা এসব কারনে এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়।এছাড়া পারিবারিক ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। এই সমস্যার প্রতিকার হিসেবে পর্যাপ্ত পানি পান, কম পিউরিনযুক্ত খাবার খাওয়া, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করা জরুরি। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, যা বাতের ব্যথা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
পুষ্টিহীনতা বা শরীরের ভিটামিন D ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতিঃ
পুষ্টিহীনতা একটি বড় কারণ বাতের ব্যথা সৃষ্টির জন্য।বিশেষ করে শরীরে ভিটামিন D ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে, যা জয়েন্টে ব্যথা, ফাঁপা ও চলাফেরায় অস্বস্তি তৈরি করে। ভিটামিন ডি শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে। হাড় নরম ও ভঙ্গুর হয় ভিটামিন ডি এর অভাবে। মানুষের শরিরে ক্যালশিয়াম হলো হাড়েড় প্রধান উপাদান ।যার ঘাটতি হলে হাড় ক্ষয় হতে থাকে। ফলে বাতের ব্যথা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। বিশেষ করে যারা পর্যাপ্ত পরিমাণে রোদে না যান, দুগ্ধজাত খাবার কম খান, অথবা দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকেন, তাদের মধ্যে এই ঘাটতি বেশি দেখা যায়। শিশুরা, বয়স্করা ও গর্ভবতী নারীরাও অর্থাৎ সকল শ্রেণির মানুষ এই সমস্যার ঝুঁকিতে থাকেন। সমাধান হিসেবে ভিটামিন D-সমৃদ্ধ খাবার (ডিমের কুসুম, মাছ, দুধ), ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার (দুধ, দই, সবুজ শাক) খাওয়া এবং নিয়মিত হালকা ব্যায়াম ও রোদে থাকা প্রয়োজন।
অতিরিক্ত ভারী কাজঃ
শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপের ফলেও মানুষের বাতের ব্যথা হয়ে থাকে। নিয়মিত ভারি কাজ বা অতিরিক্ত ওজন তোলা জয়েন্টে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে হাড়ের সংযোগস্থলে ক্ষয় শুরু হয় এবং ব্যথা বাড়ে। বিশেষ করে হাঁটু, কোমর, কাঁধ ও হাতের জয়েন্ট এই ধরনের কাজের কারণে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষিকাজ, নির্মাণশ্রম বা ভারী বোঝা বহনকারী পেশাজীবীরা এই সমস্যায় বেশি ভোগেন। শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে ও জয়েন্ট সুরক্ষায় ভারি কাজের সময় সঠিক ভঙ্গি মেনে চলা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং হালকা ব্যায়াম করা জরুরি। বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কাজের ধরন সামঞ্জস্য করে নেওয়া উচিত। অতিরিক্ত চাপ পড়লে বাতের ব্যথা কেবল বেড়ে যায় এবং অনেক সময় স্থায়ী ক্ষতিরও আশঙ্কা থাকে। তাই সচেতনতা, বিশ্রাম ও সঠিক কাজের অভ্যাসই বাত নিয়ন্ত্রণে রাখার মূল উপায়।
ঠাণ্ডা বা আর্দ্র পরিবেশে বসবাসঃ
বাতের ব্যথা অনেক সময় আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। বিশেষ করে ঠান্ডা ও আর্দ্র (আদ্র) পরিবেশে বসবাস করলে এই ব্যথা অনেকের জন্য আরও কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় শরীরের রক্তসঞ্চালন ধীর হয়ে যায়, ফলে জয়েন্ট বা গাঁটে ব্যথা বেড়ে যায়। পাশাপাশি আর্দ্রতার কারণে জয়েন্টের আশপাশে তরলের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, যা ব্যথা ও ফোলাভাব বাড়াতে পারে। বৃষ্টি শুরু হলে বা ঠান্ডা বাড়লে তাঁদের বাতের ব্যথা বেড়ে যায় বলে রোগীরা জানিয়ে থাকেন।এটি মূলত আবহাওয়ার চাপ ও তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে জয়েন্টে বাড়তি চাপ পড়ার ফল। এই অবস্থায় হালকা গরম কাপড় ব্যবহার, নিয়মিত গরম সেঁক, হালকা ব্যায়াম ও শরীর উষ্ণ রাখা প্রয়োজন।
বাতের ব্যথার লক্ষণ
জয়েন্টে ফুলে যাওয়াঃ
বাতের ব্যথার অন্যতম সাধারণ উপসর্গ হলো জয়েন্ট বা গাঁটে ফোলাভাব। এটি সাধারণত শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে জয়েন্টের ভেতরে প্রদাহ সৃষ্টি করলে ঘটে। ফলে জয়েন্ট ফুলে যায়, লাল হয়ে যায় এবং স্পর্শে ব্যথা অনুভূত হয়। ফোলাভাব সাধারণত রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, গাউট বা অস্টিওআর্থ্রাইটিসের কারণে হয়ে থাকে। ইউরিক অ্যাসিড জমে গাঁটে স্ফটিক তৈরি করলেও এমন ফোলা দেখা দিতে পারে। বিশ্রাম, ঠান্ডা বা গরম সেঁক, হালকা ব্যায়াম ও প্রদাহনাশক ওষুধ ব্যথা ও ফোলাভাব কমাতে কার্যকর হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন ধরে ফোলা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। জয়েন্টে ফোলাভাব শুধু অস্বস্তিকর নয়, অবহেলা করলে তা স্থায়ী ক্ষতির কারণও হতে পারে, তাই প্রাথমিক পর্যায়ে যত্ন নেওয়াই সবচেয়ে ভালো প্রতিকার।
সকালে বেশি ব্যথা অনুভব করাঃ
সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যথা সবচেয়ে বেশি অনুভব হয় বলে বাতের রোগীরা অভিযোগ করেন। এটি একেবারে সাধারণ একটি উপসর্গ, বিশেষ করে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে। সারারাত নড়াচড়া না করার ফলে জয়েন্টগুলো অনড় থাকে, ফলে জয়েন্টের ভেতরে তরল জমে যেতে পারে। এতে করে সকালে জয়েন্ট শক্ত হয়ে যায় ও ব্যথা বেড়ে যায়। একে "মর্নিং স্টিফনেস" বা সকালের কঠোরতা বলা হয়, যা নড়াচড়া শুরু করলে ধীরে ধীরে কমে যায়। এছাড়া সকালে শরীরের তাপমাত্রা কম থাকে, রক্ত সঞ্চালন ধীর হয় এবং ব্যথার জায়গায় রক্ত চলাচল সীমিত থাকায় ব্যথা বেশি হয়। এই সমস্যা কমাতে ঘুম থেকে উঠে হালকা স্ট্রেচিং ব্যায়াম, গরম পানির সেঁক বা উষ্ণ গোসল উপকারী হতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম এবং সঠিক গদিতে শোয়া ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সুতরাং , সকালে বাতের ব্যথা বেশি হলেও কিছু সহজ অভ্যাস মেনে চললে তা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
হাঁটাচলা বা ওঠাবসার সময় কষ্ট হওয়াঃ
বাতের ব্যথা শরীরের চলাচলের স্বাধীনতায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে যখন হাঁটু, কোমর বা পায়ের জয়েন্ট আক্রান্ত হয়, তখন হাঁটা-চলা ও উঠা-বসা কঠিন হয়ে পড়ে। বাতের ফলে জয়েন্টে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, তরুণাস্থি ক্ষয় হতে থাকে এবং জয়েন্টের গতিশীলতা কমে যায়। এতে পা ভাঁজ করতে বা সোজা করতে ব্যথা হয়, অনেক সময় জয়েন্ট ফুলে যায় ও শক্ত হয়ে পড়ে। ফলে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নড়াচড়া করাও কষ্টকর হয়ে যায় এই সমস্যার কারণে দৈনন্দিন কাজ যেমন সিঁড়ি বাওয়া, চেয়ারে বসা বা নামা, এমনকি টয়লেট ব্যবহার করাও কঠিন হয়ে যায়, যা রোগীর মানসিক ও শারীরিক কষ্ট বাড়িয়ে তোলে। এ ধরনের সমস্যা কমাতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম, জয়েন্টে গরম সেঁক, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ গ্রহণ করতে হবে।
জয়েন্টে আওয়াজ হওয়াঃ
বাতের ব্যথায় অনেক সময় জয়েন্ট নড়াচড়ার সময় 'কড় কড়' বা 'চট চট' শব্দ করে, যা অনেকেই উদ্বেগের চোখে দেখেন। এই আওয়াজ সাধারণত জয়েন্টের ভেতরে তরুণাস্থি ক্ষয়ে যাওয়ার বা জয়েন্টের তরলে বায়ু জমার কারণে হয়ে থাকে। এই ধরনের আওয়াজ ও ব্যথা যদি নিয়মিত হয়, তবে তা হাড় ও জয়েন্টের অবক্ষয়ের ইঙ্গিত হতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় হালকা ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ, ও গরম সেঁক উপকারী হলেও সমস্যা বাড়লে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জয়েন্টে আওয়াজকে হালকাভাবে না দেখে সচেতনতা অবলম্বন করলে ভবিষ্যতের জটিলতা এড়ানো সম্ভব। সঠিক চিকিৎসা ও যত্নের মাধ্যমে বাতের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
ঘরোয়া চিকিৎসা ও প্রতিকার
- আদা ও মধু পেস্ট: প্রতিদিন সকালে খাওয়া উপকারী।
- লবণ পানিতে পা ভিজানো: রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়।
- সরিষার তেল ও রসুন মালিশ: ব্যথা হ্রাস করে।
- হলুদ দুধ: প্রদাহ কমায়।
- গরম সেঁক: জয়েন্টে তাৎক্ষণিক আরাম দেয়।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
- সবুজ শাকসবজি ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার: দুধ, দই, ব্রকলি, শাক—সব উপকারী।
- লাল মাংস ও তেলযুক্ত খাবার কমানো: ফ্যাট ও ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায়।
- পর্যাপ্ত পানি পান: বিষাক্ত পদার্থ ও ইউরিক অ্যাসিড দূর করে।
নিয়মিত ব্যায়াম
- হালকা হাঁটা
- যোগ ব্যায়াম
- হাঁটু ও কোমরের স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার সময়
- ব্যথা ১ সপ্তাহেও কম না হলে
- জয়েন্ট একেবারে শক্ত হয়ে গেলে
- জ্বর বা ফোলা দেখা দিলে
উপসংহার
নিয়মিত যত্ন ও ঘরোয়া প্রতিকার অনুসরণ করলে বাতের ব্যথা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে অবহেলা না করে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
ফ্রিল্যান্সিং এক্সপ্রেস ইন্সটিটিউটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url