গরমে সুস্থ থাকার ১০টি সহজ উপায়

আপনি কি গরমে সুস্থ থাকার ১০টি সহজ উপায় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কেননা আজকের আর্টিকেলে গ্রীষ্মকালের স্বাস্থ্য পরামর্শ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে। তাই তীব্র গরমে সতেজ থাকার উপায় জানতে হলে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
গ্রীষ্মকালের স্বাস্থ্য পরামর্শ: ১০টি টিপস
নিচে আপনাদের জন্য গরমে সুস্থ থাকার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যেখান থেকে আপনি খুব সহজেই গ্রীষ্মে শরীর ভালো রাখার টিপস জানতে পারবেন। তাই দেরি না করে গ্রীষ্মকালে হিটস্ট্রোক প্রতিরোধের নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন।

ভূমিকা

বাংলাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ ও সমভাবাপন্ন ও উপনিবেশিক জলবায়ুর দেশ। এখানে গ্রীষ্মকাল প্রচণ্ড তীব্র ও অসহনীয় হয়। প্রতি বছর প্রায় মার্চ থেকে শুরু করে জুন মাস পর্যন্ত প্রচণ্ড গরম, ক্লান্তি, ঘাম, ও পানিশূন্যতা মানুষের জীবনের বিরূপ প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত গরমের জন্যে ডিহাইড্রেশন ,হিটস্ট্রোক, চর্মরোগসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। এই অবস্থায় শরীর ও মনকে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করার জন্য বিশেষ সতর্কতা ও নিয়ম মেনে চলতে হবে ।

গরমে শরীর হাইড্রেটেড রাখার উপায়

গরমে শরীরকে আর্দ্র রাখা প্রয়োজন কারণ অতিরিক্ত ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে লবণ ও পানি বের হয়ে যায় এবং শরীরে লবণ ও পানির ঘাটতি হলে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি কিডনির সমস্যা, হিটস্ট্রোক, ইত্যাদি হতে পারে। গরমে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে, দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।শরীর ঘামার মাধ্যমে যে পানি শূন্যতা হয় নিয়মিত পানি পান করলে তা পূরণ হবে। গরমে আমরা বিভিন্ন শরবত ও ফলের রস যেমনঃ লেবুর শরবত, তাজা ফলের রস, ডাবের পানি (যেমনঃ বেল, কমলা, তরমুজ) শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং প্রাকৃতিকভাবে আর্দ্র রাখে।

ডাবের পানি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী ডাবের পানিতে থাকা প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ, যা শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে কার্যকরী। পানি-সমৃদ্ধ ফলমূল খাবার খাইতে হবে, যেসব ফলে প্রচুর পানি থাকে যা শরীলকে ভিতর থেকে ঠান্ডা ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে। খেলাধুলার পর বা প্রচণ্ড গরমে কাজ করলে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে খনিজ লবণ বেরিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আমরা ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় বা ওআরএস খাওয়া ভালো। অতিরিক্ত কোল্ড ড্রিংকস চা–কফি পান শরীরকে আরও বেশি ডিহাইড্রেট করে তাই এগুলো পরিহার করতে হবে। গরমে শাকসবজি ভিতিক খাবার শরীরের জন্য ভালো, এতে শরীর হাইড্রেট থাকে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও পানীয় নির্বাচন

গরমে সুস্থ থাকার নিয়ম মেনে চলতে হলে খাদ্যাভ্যাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। গ্রীষ্মকালে অসহনীয় তাপ ও ঘাম শরীরকে দুর্বল করে তোলে। এই সময় অতিরিক্ত তেল, মসলাযুক্ত ভারী খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর ।স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও পানীয় নির্বাচনে কার্যকরী উপায় গুলো হলো।

গ্রীষ্মকালে তরল ও পানি-সমৃদ্ধ খাবার যেমনঃ তরমুজ, শসা, কমলা, বাঙ্গি, পেঁপে, লাউ ইত্যাদি ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া আমাদের জন্য উপকারী কারণ গরমে পানি ও মিনারেলের ঘাটতি পূরণ করে।গরমে ঠান্ডা দই বা ঘোল হজমের জন্য খুবই উপকারী এতে শরীর ঠান্ডা রাখে ও সতেজ রাখে। গরমে লেবু, লবণ, চিনি ও মিশ্রিত শরবত শরীরে খনিজ লবণের ঘাটতি পূরণ করে।

শরীরচর্চা ও ব্যায়াম

গরমকালে সুস্থ থাকার জন্য শরীরচর্চা ও ব্যায়াম প্রয়োজন। কিন্তু ব্যায়াম করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে নইলে পানিশূন্যতা বা দুর্বলতা বা হিটস্ট্রোক হতে পারে। অতিরিক্ত ঘামের মাধ্যমে শরীরের টক্সিন বের হয়ে যায়, ঘুম ভালো হয় ও হজম শক্তি বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ক্লান্তি দূর হয়, মানসিক চাপ কমে।

অতিরিক্ত গরমের সময় সকালে বা সন্ধ্যায় ব্যায়াম করতে হবে। কারণ যখন তাপমাত্রা কম থাকে তখন ব্যায়াম করলে শরীর চাপ কম হয় ও ডিহাইড্রেশনের আশঙ্কা কমে যায়। সহনশীল ও হালকা ব্যায়াম যেমনঃ ইয়োগা, স্ট্রেচিং, হাঁটা, হালকা দৌড়। বাহিরে ব্যায়াম করলে ঠান্ডা পরিবেশ বা ছায়াযুক্ত স্থানে ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়াম এর আগে ও পরে ইলেকট্রোলাইট জাতীয় পানীয় পান করতে হবে, এতে শরীরের হাইড্রেট রাখতে সাহায্য। ব্যায়াম এর সময় সুতি হালকা আরাম দায়ক কাপড় পরিধান করতে হবে। অতিরিক্ত গরমে ব্যায়াম করা যাবে না। ব্যায়াম করতে করতে মাথা ঘোরা, দুর্বল লাগা, অত্যধিক ঘাম হলে ব্যায়াম বন্ধ করতে হবে।

হালকা ব্যায়াম ও যোগ ব্যায়াম

হালকা ব্যায়াম ও যোগ ব্যায়াম করা শরীরের জন্য উপকারী। গরমকালে শরীর ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ে এজন্য ভারী ব্যায়ামের এর পরিবর্তে হালকা ব্যায়াম ও যোগব্যায়াম করা ভালো। ব্যায়াম শরীর ও সুস্থ রাখার অন্যতম মাধ্যম। হালকা ব্যায়াম ঘাম ঝরায় না, এবং শরীরকে হাইড্রেটেড করে, ফিট রাখে ও সতেজ রাখে। গরমে হালকা ব্যায়াম করতে হবে যেমনঃ হাঁটতে হবে, প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা ২০-৩০ মিনিট হাটলে রক্তসঞ্চালন বাড়ে এবং হৃদয় সুস্থ রাখে। মাটিতে বসে হালকা ফোম রোলিং ও ব্যালেন্স ব্যায়াম করা যায়।   স্ট্রেচিং (Stretching) যেমনঃ ঘাড়, কাঁধ, পিঠ, পা ইত্যাদি স্ট্রেচিং করলে শরীর নমনীয় হয় ও পেশির জড়তা কমে যায়। ধীরে ধীরে কয়েকবার সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করে স্টেপিং করলে অতিরিক্ত ঘাম হয় না। শবাসন (Shavasana – ডেড বডি পোজ) ব্যায়ামের পর বিশ্রামের জন্য দেহকে গভীর আরাম দেয়। সেতুবন্ধাসন (Setu Bandhasana – ব্রিজ পোজ) পিঠ, কোমর ও গলা স্ট্রেচ করার জন্য কার্যকরী ব্যায়াম।ক্যাট-কাউ পোজ (Marjariasana) মেরুদণ্ড নমনীয় রাখে।

ঘরের পরিবেশ এবং ঘুমের গুরুত্ব

গ্রীষ্মকাল আমাদের স্বাস্থ্যের সঠিক যত্ন নিতে পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রচণ্ড গরম তাপমাত্রায় অস্বস্তি ও ঘাম শুধু শরীরের উপর নয়, ঘরের পরিবেশ ও ঘুমের ওপরও প্রভাব ফেলে। বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা। ঘরের জানালা-দরজা খোলা রাখলে প্রাকৃতিক হাওয়া ঘরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। গ্রীষ্মকালে নিয়মিত ফ্যান ব্যবহারে ঘামে আরাম দেয়, হালকা বাতাস রাখলে শরীরের পানিশূন্যতা কমে। ঘরে হালকা রঙের মোটা পর্দা লাগাতে হবে, এতে রোদ সরাসরি ঘরের মধ্যে আসবে না ঘর ঠান্ডা থাকবে।ঘরের আসে পাশে গাছ লাগাতে হবে এতে ঘরের পরিবেশ ঠান্ডা থাকে ও ঘুম ভালো হয় ।

গরমে কাজের সময় শরীর অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর অনেক ক্লান্ত হয়। ঘুম শরীরকে আরাম দেয় এবং শক্তি পুনরুদ্ধারে করে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় রাখে। ঘুম আমাদের শরীরে স্ট্রেস হরমোন, ইনসুলিন সক্রিয় রাখে যা আমাদের গরমে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। ঘুম আমাদের মানসিক শান্তি দেয়। করে, যেমনঃ ইনসুলিন ও স্ট্রেস হরমোন, যা গরমেও সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।

সানক্রিন ও ত্বকের যত্ন

গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপ শরীর ও ত্বকের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। দীর্ঘ সময় রোদে থাকার ফলে রঙ কালো হয়ে যায়,ত্বক পুড়ে যায়, ত্বকে র‌্যাশ, ব্রণ এমনকি সানবার্ন পর্যন্ত হতে পারে। তাই গরমে ত্বকের সুরক্ষায় সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। বাইরে যাওয়ার পূর্বে অন্তত ২০–৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন লাগাতে হবে। SPF ৩০ মানের সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। পানিতে ভিজে গেলে বা ঘামে পুনরায় সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। গলা, হাত ও পায়ের উন্মুক্ত অংশে সানস্ক্রিন লাগাতে হবে।

সানস্ক্রিন দিনে ২–৩ বার মুখে ব্যবহারে ঘাম ও তেল জমে থাকা থেকে ত্বক রক্ষা পায়। জেল টাইপ ময়েশ্চারাইজার বা অয়েল-ফ্রি ময়েশ্চারাইজার ত্বক হাইড্রেট রাখে এবং ভারী মনে হয় না। গরমে তেল -মুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার না করা। প্রাকৃতিক উপাদান যেমনঃ অ্যালোভেরা জেল, শসার রস, গোলাপজল ব্যবহৃত করা। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা, ফলমূল খাওয়া, ঘুম ঠিক রাখাও ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার

গ্রীষ্মকাল তীব্র তাপদাহ ও অসুস্থতার মৌসুম হলেও ফলমূলের ঋতু ও উজ্জ্বল রোদের সময়। গ্রীষ্মকালে আমাদের জীবনযাপনে সচেতনতা কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান করা, হালকা ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, এবং ঘরে আরামদায়ক পরিবেশ থাকতে হবে। ত্বকের সঠিকভাবে যত্ন নিলে গরমকালে সতেজ ও সুস্থ থাকা সম্ভব। গ্রীষ্মকালে পরিবার সঠিক যত্ন ও সচেতন ভাবে জীবনযাপন করলে প্রকৃতির এই ঋতুকে সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারবো।

আশা করি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি গরমে সুস্থ থাকার ১০টি সহজ উপায় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও সচেতনতা বজায় রাখলে তীব্র গরমেও সতেজ ও ফিট থাকা সম্ভব। এ ধরনের আরও স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্রিল্যান্সিং এক্সপ্রেস ইন্সটিটিউটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url