সোশ্যাল মিডিয়া ডিপ্রেশন ২০২৫: কারণ ও প্রতিকার
ডিজিটাল যুগের অতি-সংযোগ আজ মানুষের মনকে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রভাবিত করছে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী ও যুব সমাজের ভাবনা, আত্মবিশ্বাস এবং সম্পর্কগুলোতে সোশ্যাল মিডিয়ার অদৃশ্য চাপ গভীরভাবে কাজ করে। এই আর্টিকেলে জানুন—কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ধীরে ধীরে মানসিক অবসাদ বাড়ায়, এর পেছনের মনস্তাত্ত্বিক কারণ কী এবং ২০২৫ সালে সমাধান কী হতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়ার ঝকঝকে বিশ্বের আড়ালে লুকিয়ে আছে তুলনা, চাপ, অতিরিক্ত প্রত্যাশা এবং মানসিক ক্লান্তির গভীর প্রভাব। অনেকেই না বুঝেই এই ডিজিটাল দুনিয়ায় এমনভাবে ডুবে যায় যে বাস্তব জীবনের আনন্দ, সম্পর্ক এবং মানসিক স্থিতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই লেখায় আপনি জানবেন—কোন কোন ব্যবহার-ধারা ডিপ্রেশন সৃষ্টি করে এবং কিভাবে সচেতনতার মাধ্যমে এই চাপ কমানো সম্ভব।
ভূমিকা
সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার গত দশকে অসামান্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২৫ সালে কিশোর-কিশোরী ও যুবকদের মধ্যে মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতার হারও উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকে। যদিও সব সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারই ক্ষতিকর নয়, কিন্তু নির্দিষ্ট ব্যবহারধারা, ডিজাইন বৈশিষ্ট্য ও সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট মিলিত হয়ে কিছুকাল ধরে কিছু মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতা ও মানসিক সমস্যা বাড়াতে সাহায্য করছে।
অতিরিক্ত ব্যবহার
বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বন্ধু-পরিবারের সাথে যোগাযোগ, তথ্য সংগ্রহ, বিনোদন থেকে শুরু করে পড়াশোনা বা ব্যবসা সব কিছুতেই এর ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু যখন এই ব্যবহার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, তখন তা মানসিক, সামাজিক এবং শারীরিক জীবনে নানা নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি এখন বিশ্বের বহু দেশে একটি আলোচিত সমস্যা। মানসিক প্রভাবের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সমস্যা হলো ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদ। মজার বিষয় হলো:- যদিও ডিজিটাল নেটওয়ার্ক মানুষকে সংযুক্ত রাখার কথা, কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহার বরং একাকীত্ব বাড়ায়। কারণ বাস্তব জীবনের সম্পর্ক কমে যায়, পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো কমে।
ভার্চুয়াল সংযোগ বাস্তব সম্পর্কের বিকল্প হতে পারে না এই একাকী অনুভূতিই ডিপ্রেশনের বড় উৎস। অনেকেই বাস্তব জীবনের সমস্যা এড়িয়ে ডিজিটাল ভুবনে সময় কাটায়। এটি এস্কেপিজমের (Escapism) অভ্যাস তৈরি করে— যা বাস্তব সমস্যাগুলোকে আরও জটিল করে তোলে। ফলে মানসিক চাপ বাড়ে ও অবসাদ গভীর হয়।
সামাজিক প্রভাব ও চাপ
অনলাইন সামাজিক প্ল্যাটফর্ম যোগাযোগ, শেখা ও বিনোদনের সুযোগ তৈরি করলেও, একই সাথে সৃষ্টি করছে নতুন মানসিক চাপ। সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে মানুষ সাধারণত নিজের জীবনের সবচেয়ে ভাল, আকর্ষণীয় এবং সফল মুহূর্তগুলো দেখায়। সংগ্রাম, সমস্যা, ব্যর্থতার দিকগুলো লুকিয়ে থাকে। ফলে অন্যের জীবন বাস্তবের তুলনায় বেশি উজ্জ্বল মনে হয়। ডিজিটাল যোগাযোগমাধ্যম একই সঙ্গে শত শত মানুষের সাফল্য, অর্জন ও বিলাসী মুহূর্ত আপনার সামনে তুলে ধরে।
এক নজরে এত মানুষের সঙ্গে তুলনার সুযোগ বাস্তব জীবনে কখনও পাওয়া যায় না, তাই তুলনার তীব্রতা দ্রুত বাড়ে। এই অস্বাস্থ্যকর তুলনা মনকে হীনমন্যতা, উদ্বেগ ও হতাশার দিকে ঠেলে দেয় যা ডিপ্রেশনের বড় কারণ। সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মগুলো এমনভাবে তৈরি যত বেশি এনগেজমেন্ট, তত বেশি সন্তুষ্টি। এতে মানুষ নিজেকে অন্যের সংখ্যা-ভিত্তিক সাফল্যের সাথে তুলনা করতে শুরু করে।
অ্যালগরিদম বারবার এমন কনটেন্ট সামনে আনে যা ‘পারফেক্ট লাইফ’, সাফল্য বা আভিজাত্য দেখায়। ফলে তুলনার সুযোগ আরও বাড়ে। দীর্ঘমেয়াদি তুলনা মানসিক অস্থিরতা বাড়ায়। নিজের সাফল্যকে ছোট মনে হওয়ায় দুশ্চিন্তা তৈরি হয় এবং নেতিবাচক চিন্তা দানা বাঁধে। ভার্চুয়াল দুনিয়ার নিখুঁত জীবনের সাথে নিজের জীবন মিলাতে গিয়ে মানুষ বাস্তব সাফল্যকে ভুলে যায়।
ঘুম ও শারীরিক প্রভাব
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম মানুষের মানসিক অবস্থাকে নানা ভাবে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে ডিপ্রেশন বা হতাশা বাড়লে শরীর ও বিশ্রাম-চক্র (Sleep Cycle) সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনলাইন চাপ, তুলনা, সাইবার বুলিং, নেতিবাচক মন্তব্য— এসব কারণ মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং ধীরে ধীরে শারীরিক সুস্থতাও নিচের দিকে নামিয়ে আনে। মোবাইল স্ক্রিনের নীল আলো মেলাটোনিন নামে ঘুমের হরমোনকে কমিয়ে দেয়। এটি প্রভাব ফেলে শরীরের ক্লান্তি দূর হওয়ার ক্ষমতায়, মানসিক শান্তিতে এবং নিয়মিত রাত্রিযাপন বজায় রাখতে। ডিপ্রেশন থাকলে মানুষ আরও বেশি অনলাইনে ডুবে থাকে, ফলে নীল আলোর ক্ষতি দ্রুত বাড়ে।
রাত্রিকালীন বিশ্রামের ঘাটতি কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) বাড়ায়। ফলে শরীরের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়, ক্ষুধা বেড়ে যায়, ওজন বাড়ে। আবার শয়ন ঠিক না হলে শরীরে শক্তি কমে যায়, মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়, কাজে ভুল বাড়ে। এছাড়া কম ঘুমে শরীরের স্ট্রেস লেভেল বাড়ে, যা দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদযন্ত্রের সমস্যা এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিন ব্যবহারে চোখ শুষ্ক হয়ে যায়, মাথা ব্যথা করে এবং ভিশন ব্লার হতে পারে। ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী রাখে।
তন্দ্রার অভাব হলে অসুস্থতা দ্রুত লাগে এবং সর্দি-জ্বর ঘন ঘন হতে পারে। ডিপ্রেশনের কারণে— কেউ অতিরিক্ত খাওয়া শুরু করে, কেউ আবার খাদ্যাভ্যাস হারিয়ে ফেলে দুই অবস্থায়ই ওজনের পরিবর্তন হয়। সাথে বিশ্রাম কমে গেলে শরীরের বিপাকক্রিয়া (Metabolism) দুর্বল হয়ে যায়, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে। নিয়মিত বিশ্রামঘাটতি ও ডিপ্রেশন একসঙ্গে থাকলে— স্থায়ী ক্লান্তি, রাগ, অস্থিরতা, মনোযোগ হারানো, প্যানিক অ্যাটাক এবং মানসিক স্থিরতা কমে যাওয়া ইত্যাদি এসব সমস্যা দীর্ঘমেয়াদে বড় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত হতে পারে।
সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে যারা
যোগাযোগ, বিনোদন, কাজ— সবই এখন ইন্টারনেট ভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। কিন্তু সকল ব্যবহারকারী সমানভাবে ঝুঁকির মধ্যে থাকেন না। কিছু নির্দিষ্ট বয়স, মানসিক অবস্থা বা সামাজিক শ্রেণির মানুষ বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হন। ১৩–২৫ বছর বয়স মানুষের আবেগ, আত্মসম্মান ও পরিচয়ের বিকাশের সময়। এই বয়সে বাহ্যিক স্বীকৃতি (likes, reactions, followers) তাদের আত্মমূল্যবোধকে প্রভাবিত করে।
তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে কারণ অন্যের সাথে তীব্র সামাজিক তুলনা, অনলাইন বুলিং বা নেগেটিভ কমেন্টে ভেঙে পড়া, জনপ্রিয়তার চাপে মানসিক অস্থিরতা, ঘুম/রাত্রিকালীন বিশ্রামের ব্যাঘাত এবং পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হয়ে থাকে। যারা আগে থেকেই উদ্বেগ, ডিপ্রেশন বা স্ট্রেসে ভোগেন, তারা অনলাইনের নেতিবাচক তথ্য বা তুলনার কারণে দ্রুত ভেঙে পড়েন। কারণ নেতিবাচক খবর দেখে মানসিক চাপ বাড়ে এবং খারাপ কমেন্ট বা বিতর্কে জড়িয়ে পড়লে উদ্বেগ বাড়ে।
জীবনে ঘনিষ্ঠ কেউ না থাকলে মানুষ ইন্টারনেটভিত্তিক সম্পর্কের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলে ভুয়া বন্ধুত্ব বা প্রতারণার শিকার হওয়া, মানসিক সংযোগের অভাব পূরণ করতে অতিরিক্ত স্ক্রল করা এবং আত্মসম্মান কমে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। শিশু ও প্রি-টিনরা (৯–১২ বছর) নেটওয়ার্ক প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তা বোঝে না, ফলে তারা ভুল কনটেন্টের শিকার হতে পারে। এদের প্রধান ঝুঁকি হলো সহিংস বা বয়স-অনুপযুক্ত ভিডিও দেখা, গেম বা অ্যাপ আসক্তি, সাইবার বুলিং, অজান্তে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা এবং শিক্ষাব্যবস্থায় মনোযোগ নষ্ট হয়।
আবার যারা তথ্য বিশ্লেষণ কম করেন তারা সহজেই গুজব, প্রচারণা বা বিভ্রান্তিকর পোস্টে প্রভাবিত হন। এছাড়া ডিজিটাল কমিউনিটি ভিত্তিক কাজ করা মানুষদের (Influencer, Creator) আয়, পরিচিতি ও পেশা নির্ভর করে ফলোয়ার, ট্রেন্ড ও রিচ-এর ওপর। ফলে ফলোয়ার কমলে হতাশা, সারাদিন কনটেন্টের চাপ, মানহানিকর কমেন্ট এবং ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা হারানো ইত্যাদির ফলে ২০২৫ সালে সোশ্যাল মিডিয়া ডিপ্রেশন বাড়ছে।
প্যারেন্টাল মনিটরিং
ডিজিটাল যুগে শিশু ও কিশোররা খুব অল্প বয়সেই স্মার্টফোন, ভিডিও প্ল্যাটফর্ম, গেম ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। যদিও এগুলো শেখার, যোগাযোগের ও বিনোদনের মাধ্যম, তবুও সঠিক নজরদারি ছাড়া শিশুরা নানা ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। তাই পিতামাতার পর্যবেক্ষণ বা প্যারেন্টাল মনিটরিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভার্চুয়াল মাধ্যম সব ধরনের ভিডিও, ছবি ও তথ্য সহজেই পাওয়া যায়— যার কিছু শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য ক্ষতিকর।
প্যারেন্টাল নজরদারি নিশ্চিত করে: সহিংস দৃশ্য, অশালীন কনটেন্ট ভীতি সৃষ্টিকারী বা গুজব থেকে বাচ্চাকে নিরাপদ রাখা। অভিভাবকদের নিয়মিত নজর রাখতে হবে— সন্তান কি সহজেই বিরক্ত হয়? পড়াশোনায় মনোযোগ কমছে কি? হঠাৎ চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে কি? সামাজিক মেলামেশা কমে গেছে? সাজানো-গোছানো অনলাইন জীবন দেখে হীনমন্যতা অনুভব করছে? এসব লক্ষণ ডিপ্রেশনের শুরু হতে পারে, যা দ্রুত বোঝা জরুরি। শুধু নিষেধাজ্ঞা দিলে সন্তানরা আরও গোপনে প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারে।
বরং অভিভাবকের উচিত বন্ধুর মতো কথা বলা, সমস্যা শোনার চেষ্টা করা, বিচার না করে মূল্যায়ন করা যাতে সন্তান ভয় না পেয়ে নিজের অনলাইন অভিজ্ঞতা শেয়ার করে। বাচ্চারা সহজেই ভুয়া প্রোফাইল, স্ক্যাম, অনলাইন গেমিং প্রতারণা বা অজানা লিঙ্ক এগুলোতে ঝুঁকে পড়ে। তাই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষতিগুলোর কথা মাথায় রেখে পিতামাতা নজরদারি রাখলে এটি প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়া, অনলাইন ব্যবহারের মানসিক প্রভাব ছেলে ও মেয়েদের ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে, যা অভিভাবকদের বোঝা জরুরি।
লিঙ্গভেদে মানসিক প্রভাব
প্যারেন্টাল মনিটরিং-এর সময় ছেলে-মেয়ে উভয়ের মানসিক প্রভাব ভিন্ন হওয়ায়, তাদের আচরণ, মানসিক গঠন ও সামাজিক প্রত্যাশা অনুযায়ী পার্থক্য বোঝা জরুরি। বিশেষ করে তরুণী ও কিশোরী মেয়েদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ডিপ্রেশনের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়। এই পার্থক্যের মূল কারণগুলো বোঝা মানসিক সুস্থতা রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েরা সাধারণত অনলাইনে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে ফলে তারা সহজেই সামাজিক তুলনা, আত্মসম্মানহীনতা ও মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়, যা হতাশার ঝুঁকি বাড়ায়।
তারা ফিল্টার করা নিখুঁত ছবি, মেকওভার ভিডিও, সেলিব্রিটি ও ইনফ্লুয়েন্সারের আদর্শ চেহারা, অবাস্তব সৌন্দর্যের মান এসব দেখে নিজেদের শরীর ও চেহারার সঙ্গে তুলনা শুরু করে। ফলে দেখা দেয়— আত্মসম্মানের ঘাটতি, নিজের প্রতি অসন্তুষ্টি, শরীর নিয়ে লজ্জাবোধ, দৈনন্দিন জীবনে চাপ এগুলো দীর্ঘমেয়াদে ডিপ্রেশনের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
মেয়েরা আবেগপ্রবণ বিষয়গুলো গভীরভাবে ধারণ করে। তাই— সম্পর্কের দূরত্ব, ব্রেকআপ, নেতিবাচক মন্তব্য, বন্ধুদের সঙ্গে তুলনা, মনোযোগ না পাওয়া এসব বিষয় তাদের ওপর মানসিকভাবে বড় আঘাত ফেলে। ফলস্বরূপ, উদ্বেগ ও হতাশার ঝুঁকি বাড়ে। সাইবার বুলিং উভয় লিঙ্গকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে, তবে প্রভাব আলাদা। মেয়েরা গভীর হতাশা, কাঁদা, ভেঙে পড়া, আত্মসম্মান কমে যাওয়া, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক কষ্টে ভুগে।
ছেলেরা সাধারণত— গেম, প্রযুক্তি, তথ্যভিত্তিক ভিডিওতে সময় বেশি দেয়, নিজের ব্যক্তিগত জীবন কম শেয়ার করে, লাইক–কমেন্টকে অতটা গুরুত্ব দেয় না, তুলনামূলক কম সামাজিক তুলনা করে। তাই ছেলেদের ক্ষেত্রে ডিপ্রেশনের কারণ বেশি হয় গেমিং আসক্তি, “মাসল বডি” ট্রেন্ড, সাইবার বুলিং, বা অনলাইন ট্রোলিং–এর ক্ষোভ থেকে; মেয়েদের মতো আবেগ-নির্ভর তুলনা থেকে নয়। এরা সাধারণত সম্পর্কজনিত বিষয়গুলোতে কম প্রকাশ করে, ফলে তাদের ডিপ্রেশন অনেক সময় অভ্যন্তরীণ চাপ, রাগ বা গেমিং নির্ভরতা থেকে তৈরি হয়।
ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতা
ডিজিটাল যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার অনেককে উদ্বেগ, হতাশা ও মানসিক চাপে ফেলে দিচ্ছে। তবে কিছু সচেতনতা ও সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে দীর্ঘসময় কাটালে মস্তিষ্ক ক্রমাগত উত্তেজিত অবস্থায় থাকে। নোটিফিকেশন, লাইক, কমেন্ট বা তুলনামূলক পোস্ট দেখার ফলে মানসিক চাপ বাড়ে। ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করলে-মনোযোগ বাড়ে, মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়, ঘুমের মান উন্নত হয়, নেতিবাচক তুলনা কমে এবং নিজের বাস্তব জীবনের প্রতি আগ্রহ বাড়ে।
ব্যবহারের সময়সীমা নির্ধারণ করা উচিত প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের বেশি স্ক্রিনে না থাকার নিয়ম তৈরি করা, মোবাইলে Screen Time/Digital Wellbeing ফিচার ব্যবহার করা যেতে পারে এবং ব্রেক ছাড়া দীর্ঘসময় স্ক্রল করা এড়ানো উচিত। রাতের বেলা অতিরিক্ত স্ক্রলিং মনস্তাত্ত্বিক উত্তেজনা বাড়ায় এবং বিশ্রাম নেওয়ার ক্ষমতা কমায়। রাত ১০টার পর স্ক্রিন ব্যবহার কমালে মানসিক স্থিতি উন্নত হয়। যদি কখনো মনে হয়— মুড খারাপ, অনুপ্রেরণা কমছে, আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি, একা লাগছে তাহলে কিছুদিন ডিজিটাল মাধ্যম থেকে বিরতি নেওয়া উচিত।
অফলাইনে বেশি সময় দিতে হবে, যেমন: বাস্তব মানুষের সাথে সময় কাটানো, বই পড়া, হাঁটা, ব্যায়াম, শখের কাজ করা এসব কাজ মনকে স্থির রাখে। সব ধরনের পোস্ট মানসিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে না। নেতিবাচক, বিতর্কিত বা আগ্রাসী কনটেন্ট এড়ানো, শিক্ষামূলক, অনুপ্রেরণামূলক, হাস্যরসাত্মক কনটেন্ট বেছে নেওয়া, বুলিং, ট্রলিং, অতিরিক্ত গ্ল্যামারাইজড প্রোফাইল থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি এগুলো ডিপ্রেশন হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও যদি ডিপ্রেশন দীর্ঘস্থায়ী হয়— কাউন্সেলর, সাইকোলজিস্ট, মানসিক স্বাস্থ্য সাপোর্ট গ্রুপ এসবের সাহায্য নেওয়া উচিত। মানসিক স্বাস্থ্য উপেক্ষা করলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
উপসংহার
২০২৫-এ সোশ্যাল মিডিয়া-সংক্রান্ত বিষণ্ণতা যদিও একটি বহু-মাত্রিক সমস্যা, তবে সমাধানও বহুমুখী যা দ্বারা এই ঝুঁকি ব্যাপকভাবে কমানো সম্ভব। সমস্যা যদি তীব্র হয়, পেশাদার মানসিক সহায়তা নেওয়া সর্বদা সঠিক প্রথম ধাপ।
২০২৫ সালে সোশ্যাল মিডিয়া ডিপ্রেশন শুধু প্রযুক্তিগত সমস্যা নয়—এটি আবেগ, আচরণ, সমাজ ও মানসিক স্বাস্থ্যের জটিল আন্তঃসম্পর্কের ফলাফল। তবে সচেতন ব্যবহার, সঠিক সীমা নির্ধারণ, ইতিবাচক কনটেন্ট নির্বাচন এবং প্রয়োজনে পেশাদার মানসিক সহায়তা গ্রহণের মাধ্যমে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়। ডিজিটাল দুনিয়া যতই দ্রুত বদলাক—নিজের মানসিক সুস্থতা রক্ষা করা আমাদের সবার প্রথম দায়িত্ব। এরকম আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট Freelancing Express Institute নিয়মিত ভিজিট করুন।
ফ্রিল্যান্সিং এক্সপ্রেস ইন্সটিটিউটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url