রাতকানা রোগ: কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায়
আপনি কি জানতে চাচ্ছেন কেন হয় রাতকানা, কী লক্ষণ এবং কীভাবে প্রতিকার করবেন? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কেননা আজকের আর্টিকেলটিতে রাতকানা রোগের কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্ককে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাই রাতকানা রোগের কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জানতে হলে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে রাতের অন্ধত্ব (Night Blindness) এর কারণ, উপসর্গ ও প্রতিকার বিষয়ে। যেখান থেকে আপনি খুব সহজেই রাতকানা রোগের কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় জানতে পারবেন। তাই দেরি না করে রাতকানা রোগের কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জেনে নিন।
ভূমিকা
"নাইট ব্লাইন্ডনেস" (Night Blindness) বা "নাইটালোপিয়া" কে চিকিৎসাবিজ্ঞানে রাতকানা রোগ বলা হয়। অন্ধকার বা আলো-স্বল্প পরিবেশে ভালভাবে দেখতে পারে না এবং তারা অনেক সমস্যা অনুভব করে।সন্ধ্যা বা রাতে চলাফেরার সময় অনেক সমস্যা সম্মুখীন হন এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং প্রায়শই অন্ধকারে বস্তু চিনতে পারেন না এবং পথ চলার সময় হোঁচট খান।
রাতকানা রোগ কী?
রাতকাণা হলো এমন একটি চোখের সমস্যা যেখানে ব্যক্তি অন্ধকারে ঠিকমতো দেখতে পারেন না, এবং এটি সময়মতো চিকিৎসা না করার ফলে অনেক ব্যক্তির মারাত্মক ভাবে দৃষ্টিহানির কারণ হয়ে থাকে। এই রাতকানা রোগে ভোগা মানুষে রা সাধারণত দিনের আলোতে স্বাভাবিকভাবে সব কিছু ভালো দেখতে পারেন, কিন্তু সন্ধ্যা নামলে বা অন্ধকার জায়গায় গেলে তারা সব কিছু অস্পষ্ট দেখেন, চলাফেরা করতে হোঁচট খান, এবং চোখে ঝাপসা অনুভব করে থাকেন।
ভিটামিন A-এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়ে থাকে। এর অভার দীর্ঘস্থায়ী হলে চোখের কর্নিয়ায় আলসার হতে পারে। আর এই অবস্থাতে জেরোফথ্যালমিয়া বলা হয়। ভিটামিন A-এর অভাবে রাতকানা রোগের কারণে দেহের বৃদ্ধি ও বাধাপ্রাপ্ত হয়। রাতকাণা রোগ সাধারণত চোখের রেটিনায় অবস্থিত রড কোষের (Rod cells) অকার্যকারিতার কারণে হয়ে থাকে যার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি কম আলোতে দেখার জন্য দায়ী । ভিটামিন ‘এ’-হচ্ছে এই রাতকানা রোগের প্রধান কারণ। আবার বংশগত রোগ, ছানিপড়া, গ্লুকোমার ওষুধ, রেটিনার রোগ, অথবা ডায়াবেটিসের কারণেও এই রাতকানা রোগে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে।
রাতকানার প্রধান কারণসমূহ
- ভিটামিন এ (Vitamin A) এর ঘাটতিঃ সাধারণত ভিটামিন এ এর অভাবে রাত কানা রোগ হয়। উদ্ভিজ্জ উৎসের ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার সবুজ শাক-সবজিতে ভিটামিন এ থাকে এগুলোর অভাব হলে রাতকানা রোগ হয়। ভিটামিন এ এর অভাবে রড সেল (Rod cells) সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না যার কারণে রাতকানা রোগ মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ে।
- পিগমেন্টোসাঃ এই রাতকানা রোগ কে বংশগত (genetic) রোগ বলা হয় কারন রড সেল ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে। যার ফলে ধীরে ধীরে রাতকানা হয় এবং পরবর্তীতে সম্পূর্ন ভাবে অন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- ক্যারাটোকোনাসঃ রাতকানা রোগের আরেকটা কারন হলো চোখের কর্নিয়া ধীরে ধীরে পাতলা ও শঙ্কু আকৃতির হয়ে যাওয়া। ডায়াবেটিস জনিত কারণে রেটিনার রক্তনালিতে ক্ষতি হলে দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যার সৃষ্টি হয় যার কারনে রাতকানা রোগ হতে পারে।রাতকানার আরেটকা জটিল রোগ হলো চোখে ছানি অপারেশন বা ট্রমা।
রাতকানার লক্ষণ ও উপসর্গঃ
রাতে স্বাভাবিক ভাবে দেখতে সমস্যা হয়। আলো থেকে অন্ধকারে যাওয়ার পর চোখের মানিয়ে নিতে অনেক কষ্ট হয়। চোখে জ্বালাপোড়া, চুলকানি, অস্বস্তি অনুভব হওয়া।চোখে আলো সহ্য না হওয়া।হঠাৎ আলোতে চোখে ব্যথা অনুভব করা।
কারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ?
- শিশুরাঃ যেসব শিশু পুষ্টিহীনতায় ভোগে বা ছোটবেলা থেকে ভিটামিন A-এর অভাব থাকে।
- গর্ভবতী নারীঃ গর্ভাবস্থায় ভিটামিন A-এর চাহিদা বেশি থাকে, অভাবে মা ও শিশুর উভয়ের রাতকানা হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
- বয়স্ক ব্যক্তিঃ বয়স বৃদ্ধির ফলে রেটিনার কার্যকারিতা কমে যায় এবং শরীরে ভিটামিন শোষণের ক্ষমতা হ্রাস পায়।
- দরিদ্র শ্রেণিঃ যারা নিয়মিত ভিটামিন A-সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন না।
- দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিঃ যেমন ডায়াবেটিস বা লিভারের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় আক্রান্তদের মধ্যে রাতকানা দেখা দিতে পারে।
রাতকানা রোগে সব শ্রেণির মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন, তবে নিম্নোক্ত ব্যক্তিরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন:
এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত এবং নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করা উচিত।
প্রতিকার ও চিকিৎসা
রাতকানা রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের প্রাণীজ্জ এবং উদ্ভিজ্জ খাবার খেতে হবে। গাজর, মিষ্টি কুমড়া, পাকা পেঁপে, ডিমের কুসুম এবং মাছের তেল এই সমৃদ্ধ খাবারে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। সাধ্য হলে কড মাছ খেতে হবে কারন কড মাছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ থাকে। শিশুদের কে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে। ভিটামিন এ এর অভাব দীর্ঘস্থায়ী হলে লোমকূপের গোড়ায় ছোট ছোট গুটি সৃষ্টি হয়। শিশুদের চোখের যত্ন নিতে হবে, ময়লা হাতে চোখে হাত দেওয়া / চোখ স্পর্শ করা যাবে না। মাঝে মাঝে চোখের অবস্থা জানার জন্য চোখের পরীক্ষা করতে হবে। অতিরিক্ত আলোতে সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।যদি দরকার হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চশমা ব্যবহার করতে হবে।
প্রতিরোধের উপায়
পুষ্টি যুক্ত খাবার গ্রহণ করলে রাতকানা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। যে সকল খাবার এ ভিটামিন এ আছে সেই সকল খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। রাতকানা রোগ হয়েছে বলে মনে হলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। পরিবারের সকলের ভিটামিন এ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
উপসংহার:
আমাদের সমাজে রাতকানা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। এই রোগটি সকল বয়সের মানুষের মধ্যে দেখা যায়। এজন্য আমাদের খাদ্য তালিকা সম্পর্কে ধারণা রেখে সকল খাবার খেতে হবে। সব সময় ভিটামিন যুক্ত খাবার খেতে হবে। রাতকানা কে দূরে রেখে আমাদের সমাজকে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে হবে। রাতকানার কারনে মানব জীবনে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। এজন্য আগে থেকে সচেতন হয়ে সকল সমস্যা প্রতিরোধ করতে হবে। তাহলে মানবজাতি সুন্দর ভাবে জীবন পরিচালনা করতে পারবে।
আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি জানতে পেরেছেন রাতের অন্ধত্ব বা রাতকানা রোগ কীভাবে হয়, কী উপসর্গ দেখা দেয় এবং তা থেকে মুক্তির উপায় কী। আশা করি এসকল তথ্যগুলো আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। তাই এধরণের গুরুত্বপুর্ণ তথ্য বেশি বেশি পড়তে ও জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
ফ্রিল্যান্সিং এক্সপ্রেস ইন্সটিটিউটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url