২০২৫ সালে বাংলাদেশে চাকরির বাজার: নতুন সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ
২০২৫ সালে বাংলাদেশের চাকরির বাজার কেমন হতে পারে তা নিয়ে অনেকেই জানতে আগ্রহী। পরিবর্তনশীল বিশ্ব অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও স্থানীয় চাহিদার কারণে বাংলাদেশে কর্মসংস্থান ২০২৫ এক নতুন রূপ পাচ্ছে। একদিকে আসছে নতুন সেক্টরে চাকরির সুযোগ, অন্যদিকে বাড়ছে প্রতিযোগিতা ও দক্ষতার চাহিদা। তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, ই-কমার্স ও ফ্রিল্যান্সিং খাতে তৈরি হচ্ছে নতুন সম্ভাবনা, আর ঐতিহ্যবাহী শিল্পখাতে আসছে নানা পরিবর্তন। তাই এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ চাকরি বাজার কেমন হবে, কোন সেক্টরে নতুন সুযোগ আসছে এবং তরুণদের জন্য কি ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন।
আপনি যদি জানতে চান ২০২৫ সালে বাংলাদেশের চাকরির বাজার কেমন হতে যাচ্ছে, তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এখানে আমরা আলোচনা করব বাংলাদেশে কর্মসংস্থান ২০২৫, সম্ভাবনাময় নতুন সেক্টর, তরুণদের জন্য চাকরির সুযোগ এবং ভবিষ্যৎ চাকরি বাজারের চ্যালেঞ্জ নিয়ে। তাই বিস্তারিত জানার জন্য আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
ভূমিকা
শিল্পখাতের রূপান্তর, বিশ্ব অর্থনীতি, প্রযুক্তি, স্থানীয় চাহিদার পরিবর্তনের ফলে কর্মসংস্থানের ধরণে নতুন সুযোগ যেমন তৈরি হচ্ছে, তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জও দেখা দিচ্ছে। ই-কমার্স, স্বাস্থ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত, ফ্রিল্যান্সিং, সরকারি ও বেসরকারি খাত–সব মিলিয়ে এটি তরুণদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে।
বাংলাদেশের বর্তমান চাকরির বাজার
একটি পরিবর্তনশীল ও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান চাকরির বাজার। নতুন খাতে চাকরির সুযোগ যেমন বাড়ছে, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে কাজের ধরন বদলে যাচ্ছে। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সাইবার সিকিউরিটি, তথ্যপ্রযুক্তি, ডিজিটাল মার্কেটিং, এবং ডেটা বিশ্লেষণ খাতে কর্মসংস্থান উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। লজিস্টিকস, ফুড ডেলিভারি, ই-কমার্স এবং অ্যাপ-ভিত্তিক সেবাখাতে তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে নতুন ব্যবসা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। টেলিযোগাযোগ, বীমা, ব্যাংকিং ও শিক্ষা, বিশেষ করে অনলাইন শিক্ষায় নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
প্রযুক্তি-জ্ঞান, সময়োপযোগী দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা মূল চাবিকাঠি হতে পারে তরুণদের জন্য সফল ক্যারিয়ার গঠনের। বাংলাদেশের GDP-এর প্রায় ১০% এবং প্রায় ৪ মিলিয়ন কর্মী নিয়োজিত রেডিমেড গার্মেন্টস খাতে যা এখনও বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত। প্রায় ৫ মিলিয়ন গার্মেন্ট কর্মীর মধ্যে ৫৫% নারী, এবং তারা ২.৭ মিলিয়ন নারী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। ৬০–৭০% স্নাতক ১–২ বছর পরেও চাকরি পায় না (BDjobs অনুসারে)। অনেক নবাগতরা প্রশিক্ষণের পর মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে চাকরি ছেড়ে দেয়, তাই অধিকাংশ কোম্পানি নবাগতদের নিয়োগে অনীহা প্রকাশ করে। মোট বেকারত্ব হার এখনও নিম্ন, তবে উচ্চশিক্ষিত ও যুবদের মধ্যে বেকারত্ব উদ্বেগজনক।
সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সুযোগ
সরকারি চাকরি এবং বেসরকারি চাকরি এই দুটি বড় ভাগে বিভক্ত বাংলাদেশের চাকরির সুযোগ। বেসরকারি চাকরি দ্রুত উন্নতির সুযোগ দেয় এবং সরকারি চাকরি স্থিতিশীলতা দেয়, তাই ব্যক্তিগত লক্ষ্য, দক্ষতা ও জীবনধারার উপর নির্ভর করে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী বেছে নিতে হয় সরকারি চাকরি করবেন নাকি বেসরকারি চাকরি।
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে: শিক্ষা বিভাগ, বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস, ৪৮ তম বিসিএস ৩০০০ পদের নিয়োগ) , প্রযুক্তি ও প্রকৌশল খাত, প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্বাস্থ্য বিভাগ ইত্যাদি। সরকারি চাকরির বেশকিছু সুবিধা রয়েছে, যেমন :সরকারি চাকরিতে পেনশন, অবসরকালীন সুযোগ, পদোন্নতি ও পদমর্যাদা বৃদ্ধি এবং সামাজিক মর্যাদা পাওয়া যায়। তবে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নিয়োগ সীমিত যেখানে প্রতি বছর প্রায় ২০ লক্ষ তরুণ কর্মসংস্থানে প্রবেশ করে সেখানে সরকারি খাতে মাত্র প্রায় ১৮,০০০ নিয়োগ পাওয়া গিয়েছিল, ২০২৪ সালে।
অপরদিকে বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে: বাণিজ্য ও শিল্পখাত, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও ও উন্নয়ন সংস্থা এবং আইটি ও সফটওয়্যার খাত ইত্যাদি। বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে দ্রুত পদোন্নতির এবং বিদেশে কাজের সুযোগ ও প্রশিক্ষণের সুযোগ থাকে। এছাড়াও বেতন ও বোনাস কাঠামো অনেক ক্ষেত্রে বেশি। Hi-Tech Park প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০০,০০০ নতুন IT-সংক্রান্ত কাজ সৃষ্টির লক্ষ্য আছে। সরকারি খাতে নিয়োগ সীমিত, তবে নিরাপদ। বেসরকারি বিভাগ বিস্তৃত ও গতিশীল—তবে সেখানে বেকারত্ব, সংকট ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার ঝুঁকি রয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট ওয়ার্কের বৃদ্ধি
ইন্টারনেট বিস্তার, ডিজিটাল দক্ষতা এবং সরকারের সমর্থনে ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট ওয়ার্ক একটি শক্তিশালী শ্রমসংস্থানের ক্ষেত্র হিসেবে দ্রুত প্রসার লাভ করেছে। কর্মীরা নিজের পছন্দের কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করে সহজেই কাজ খুঁজে নিতে পারে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে বিভিন্ন ধরনের কাজের সুবিধা থাকায়। ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিস্তারের ফলে নগদ আয় যেমন বেড়েছে ( বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং খাতে আয় ২০২৫ সালে ২.৬ বিলিয়ন USD পর্যায়ে পৌঁছানোর প্রজেকশন রয়েছে), তেমনি কর্মসংস্থানের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১০ লাখ ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে ৬.৫ লাখ আইটি খাতে নিয়োজিত।
এছাড়াও রেমিট্যান্স হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আয় উৎস। ৭১% ফ্রিল্যান্সারই ৩৫ বছরের নিচে, ১৮–২৫ ও ২৫–৩০ বছর বয়সী তরুণেরাই সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ করছে। তরুণদের মধ্যে বিদেশ ভিত্তিক রিমোট চাকরির আকর্ষণ বেড়েছে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনের পর যেমন- গ্রাফিক্স, ওয়েব, অনলাইনে সহায়তা, ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি কাজে। গ্রামীণ ও দুর্ভেদ্য এলাকায় উচ্চ-গতির ইন্টারনেট সুবিধা এসেছ
২০২৫ সালে বাংলাদেশে স্টারলিংকের কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে।
ডিজিটাল প্রশিক্ষণ, তরুণ শ্রমশক্তি এবং স্টারলিংকের মতো উন্নয়নের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হলেও দক্ষতা, স্থিতিশীলতা ও নীতি নির্ধারণের মাধ্যমে এই ক্ষেত্রকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। মানুষজন এখন নিজ এলাকায় বা ঘরে বসেই কাজ করতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করছে শহরমুখী না হয়ে যার কারণে রিমোট কাজের চাহিদা দিন দিন আরো বেশি বাড়ছে।
২০২৫ সালে সম্ভাবনাময় সেক্টর
২০২৫ সালে বাংলাদেশে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য গতি ও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। ব্যাপক সম্ভাবনা এবং বিনিয়োগ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পরিবেশ, স্বাস্থ্য, উৎপাদন, প্রযুক্তি ও পরিষেবা সেক্টরগুলো।
তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট
তথ্য প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে তাই সরকার এই খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০ লাখ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির আশঙ্কা রয়েছে কেননা ২০২৫ সালের মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। দেশীয় সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো প্রস্তুত হচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করছে।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেমন: যশোর, রাজশাহী, সিলেট, গাজীপুর, ঢাকা এবং সিলেট ইলেকট্রনিক সিটি ইত্যাদি হাই-টেক পার্ক এবং IT জোন বাস্তবায়ন হচ্ছে । প্রায় ৮০ হাজার জনকে ICT-সহ বিভিন্ন খাতে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানে সহায়তা দেওয়া হয়েছে “দক্ষতা ভিত্তিক কর্মসংস্থান বিনিয়োগ কর্মসূচি”-এর মাধ্যমে। এছাড়াও বাজার ফিল্ডে প্রবল প্রবৃদ্ধি, আধুনিক অবকাঠামোর উন্নয়ন, রপ্তানি বৃদ্ধি এবং এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে তরুণদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সুযোগ তৈরি হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা খাত
বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাত সরকারের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে ২০২৫ সালে। স্বাস্থ্য সেবা মানোন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেবে এবং এই খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করবে (২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ৪১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা প্রস্তাবিত)। দ্রুত ডিজিটালাইজেশনের পথে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবা—মোবাইল হেলথ অ্যাপ, টেলিমেডিসিন এবং অনলাইন ওষুধ বিতরণ সংস্থাসমূহ তরান্বিত হচ্ছে।
টেলিমেডিসিন, অনলাইন ডাক্তার পরামর্শ, মোবাইল অ্যাপভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা এবং চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট ও প্রশাসনিক কর্মীর চাহিদা বাড়ছে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ায়। ইতিমধ্যেই বিশ্বের ১৫০টির বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে বাংলাদেশ, ফলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে গবেষণা, উৎপাদন ও মার্কেটিং-এ। এই খাতে বিভিন্ন পদে চাকরির সুযোগ রয়েছে, সেগুলো হলো: মেডিক্যাল ট্যুরিজম ম্যানেজার, হেলথ টেকনোলজি ডেভেলপার, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এবং ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষক।
ই-কমার্স ও ডিজিটাল মার্কেটিং
বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে ই-কমার্স খাত বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি অন্যতম প্রধান চাকরির উৎস হয়ে উঠছে ২০২৫ সালে। দারাজ, চ্যালেঞ্জার স্থানীয় মার্কেটপ্লেসসহ হাজারো স্টার্টআপ অনলাইন ব্যবসায় যুক্ত আছে এবং অনলাইন কেনাকাটা সহজ হয়েছে নগদ, রকেট, বিকাশের মতো মোবাইল ব্যাংকিং সেবার কারণে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রসার হয়েছে ফলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এখন সোশ্যাল মিডিয়া, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এবং কন্টেন্ট মার্কেটিং ব্যবহার করছে।
ই-কমার্স ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে চাকরির সুযোগ রয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিং স্পেশালিস্ট, কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও সোশ্যাল মিডিয়া এক্সপার্ট ইত্যাদি বিষয়ে। এছাড়া এইসব প্লাটফর্মের বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে চাকরির সুযোগ রয়েছে, যেমন: গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে চাকরির সুযোগ রয়েছে দক্ষতা অনুযায়ী। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এবং দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে তরুণরা এই খাতগুলোতে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবে।
চাকরির বাজারের প্রধান চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের ২০২৫ সালের চাকরির বাজার দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে ফলে চাকরির বাজারে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ দেখা দিচ্ছে। এগুলোর মধ্যে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে: উপযুক্ত দক্ষতা সম্পন্ন জনশক্তির অভাব, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনৈতিক সংকট, প্রযুক্তিনির্ভর চাকরির বাজারে প্রবেশ ইত্যাদি।
প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব
অনেক ক্ষেত্রেই নতুন সুযোগ তৈরি করেছে প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং স্বয়ংক্রিয়করণ, তবু চাকরি প্রার্থীদের জন্য একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব। কেবল তাত্ত্বিক জ্ঞান নয় বাস্তব প্রযুক্তি ব্যবহার করতে সক্ষম এমন কর্মী চাই প্রতিষ্ঠানগুলো কারণ বর্তমানে আন্তর্জাতিক আউটসোর্সিং বাজারে টিকে থাকতে হলে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, আপডেটেড সফটওয়্যার এবং ডিজিটাল টুলস সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
এখনও পুরোনো সিলেবাসে আটকে আছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাত্ত্বিক বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় কিন্তু সেখানে বাস্তবভিত্তিক প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ পর্যাপ্ত নয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে ভাষাগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে কারণ অনেক আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি রিসোর্স ইংরেজিতে, যা সবার জন্য সহজবোধ্য নয়। মেশিন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হচ্ছে অনেক রুটিন কাজ, ফলে চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে উচ্চ প্রযুক্তি-নির্ভর দক্ষতা ছাড়া।
চাকরিপ্রার্থীদের জন্য প্রস্তুতির উপায়
শুধু ডিগ্রি থাকলেই হবে না বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে —প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, আত্মবিশ্বাস এবং আধুনিক দক্ষতা। সঠিক প্রস্তুতি চাকরিতে সফল হওয়ার মূল চাবিকাঠি সেটি চাকরির সব ক্ষেত্রেই সে চাকরি সরকারি হোক বেসরকারি হোক অথবা ফ্রিল্যান্সিং বা রিমোট জব। সফটওয়্যার, টুলস বা প্রযুক্তি শিখুন আপনার পছন্দের খাত অনুযায়ী কারণ বর্তমান সময়ে দক্ষতা ছাড়া চাকরি পাওয়া অনেক কঠিন।
এর পাশাপাশি ভাষাগত দক্ষতা দরকার বাংলা ও ইংরেজ দুটো ভাষাতেই সাবলীল যোগাযোগের অনুশীলন করুন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুযায়ী আপনার দক্ষতা তুলে ধরুন এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা কাভার লেটার লিখুন। তবে সিভি যেন সংক্ষিপ্ত, আপডেটেড এবং প্রফেশনাল হয় সেদিক খেয়াল রাখতে হবে। ফেসবুক গ্রুপ বা পেশাজীবী ইভেন্টে অংশ নিন পেশাগত যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন।
ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতির জন্য ইন্টারভিউর আগে কোম্পানির ইতিহাস, পণ্য, ও কাজের ধরন জেনে নিন এবং সাধারণ ও সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তর অনুশীলন করুন। মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ ও আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে হবে কারণ চাকরি পাওয়ার পথে ব্যর্থতা আসতে পারে, তাই হতাশ না হয়ে ধৈর্য ধরে থাকতে হবে।
ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা ও উপসংহার
চাকরির ধরন ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা পরিবর্তিত হচ্ছে গ্লোবালাইজেশন, প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে। তাই ভবিষ্যতের চাকরিপ্রার্থীদের এবং নীতি নির্ধারকদের জন্য দিকনির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট কাজের সুযোগ বৃদ্ধি, উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হয় এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলে প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন।
বাস্তব চাকরির চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোর্স ডিজাইন করা এবং ইন্টার্নশিপ ও প্র্যাকটিক্যাল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যাতে শিক্ষার্থীরা হাতে কলমে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।
শিল্প, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চাকরিপ্রার্থী এবং সরকার একসাথে কাজ করলে বাংলাদেশের শ্রমশক্তিকে দক্ষ, উদ্ভাবনী এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
আশা করি আজকের এই আলোচনা থেকে আপনি বাংলাদেশের ২০২৫ সালের চাকরির বাজার, নতুন সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন।
আসুন, আমরা সবাই মিলে দক্ষতা অর্জন, প্রযুক্তি ব্যবহার এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে অবদান রাখি।
এ ধরনের আরও তথ্য ও বিশ্লেষণ পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
ফ্রিল্যান্সিং এক্সপ্রেস ইন্সটিটিউটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url