দারিদ্র্য বিমোচনের আন্তর্জাতিক দিবস ২০২৫: তাৎপর্য ও গুরুত্ব
আপনি কি জানতে চান ১৭ অক্টোবরের তাৎপর্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কেননা আজকের আর্টিকেলটিতে আন্তর্জাতিক দিবস ২০২৫ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাই আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য দিবস সম্পর্কে জানতে হলে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
নিচে আপনাদের জন্য আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য দিবস ২০২৫ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যেখান থেকে আপনি খুব সহজেই ১৭ অক্টোবর দারিদ্র্য দিবস সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই দেরি না করে দারিদ্র্য দিবস ২০২৫ সম্পর্কে জেনে নিন।
ভূমিকা
আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য দিবস ১৭ অক্টোবর স্মরণ করায় যে দারিদ্র্য শুধু আর্থিক সমস্যা নয়, বরং এটি মর্যাদা এবং অধিকার হরণ–এর একটি রূপ। মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি, দারিদ্র্যগ্রস্ত মানুষের সংগ্রাম ও সত্তার কথা তুলে ধরে এবং কৌশল নির্দেশনা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এই দিবসটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিশ্ব দারিদ্র্য নির্মূল দিবস: একটি পরিচিতি
ফাদার জোসেফ ট্রোকাডেরো স্কয়ারে মানুষের জমায়েতের মাধ্যমে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে ‘সাংস্কৃতিক ও নৈতিক আন্দোলন’ যেদিন প্রথমবার শুরু করেছিলেন সেদিনটি ছিল ১৭ অক্টোবর। তাই এই দিনটির ঐতিহাসিক তাৎপর্য এবং মানবাধিকারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক থাকার কারণে জাতিসংঘও এটিকে অনুমোদন দেয়।
সূচনালগ্ন: প্যারিস থেকে সূচনা
ফ্রান্সের প্যারিস শহরের ট্রোকাডেরো স্কয়ারে ১৯৮৭ সালে এটি প্রথম শুরু হয়। যেখানে চরম দারিদ্র্যে ভোগা মানুষদের সম্মান জানিয়ে একটি ‘মেমোরিয়াল স্টোন’ উন্মোচন করেন প্রায় এক লক্ষ মানুষ সমবেত হয়ে এবং প্রবাদ হিসাবে ঘোষণা করেন – "যেখানে মানুষ চরম দারিদ্র্যে জীবনধারণ করতে বাধ্য, সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়" । ফরাসি সমাজকর্মী ফাদার জোসেফ ভ্রেসিনস্কি (Joseph Wresinski) ছিলেন এই সমাবেশের প্রধান উদ্যোক্তা। তিনি নিজের জীবনের বড় একটি অংশ দারিদ্র্যগ্রস্ত মানুষের পাশে থেকে কাজ করেছিলেন।
তিনি একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করেন, যাতে লেখা ছিল: "যেখানে নারী ও পুরুষ চরম দারিদ্র্যে জীবনযাপন করতে বাধ্য হন, সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। এই অধিকারগুলোকে সম্মান জানাতে একত্রিত হওয়া আমাদের পবিত্র দায়িত্ব"। প্যারিসের ট্রোকাডেরো স্কয়ারে এই স্মৃতিফলকটি আজও অবস্থান করছে। ১৯৪৮ সালে “মানবাধিকার ঘোষণাপত্র” গ্রহণ করা হয়েছিল এই স্কয়ারেই, ফলে স্থানটির একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য ছিল।
জাতিসংঘের স্বীকৃতি
১৯৯২ সালের ২২ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এই আন্দোলনের আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে, “আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য দিবস” হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৯২ সালের ২২ ডিসেম্বর স্বীকৃতি দেয় ১৭ অক্টোবরকে তাদের গৃহীত রেজোলিউশন ৪৭/১৯৬ এর মাধ্যমে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর ১৭ অক্টোবর এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
এই স্বীকৃতি কয়েকটি দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ: ১.দারিদ্র্যকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের রূপ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসং, ২.দারিদ্র্য শুধু উন্নয়ন সমস্যা নয়, বরং একটি নৈতিক ও সামাজিক সংকট, ৩. জাতিসংঘ এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিষ্ঠিত করে যে দারিদ্র্যপীড়িত জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর ও অভিজ্ঞতা উন্নয়ন প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে।
১৭ অক্টোবর ২০২৫ – চলতি বছরের প্রতিপাদ্য ও লক্ষ্য
বিভিন্ন দেশ—বিশেষ করে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো—নানা রকম কর্মসূচি গ্রহণ করে ১৭ অক্টোবর। যেমন: নীতিনির্ধারকদের যুক্ত করা, সচেতনতামূলক সেমিনার, সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টা, দারিদ্র্যপীড়িত ব্যক্তিদের গল্প তুলে ধরা ইত্যাদি। এই দিনটিতে প্রতিবছর নতুন নতুন থিম ঘোষণা করা হয়।
২০২৪ সালের থিম
২০২৪ সালের থিম ছিলো “সামাজিক ও প্রতিষ্ঠানগত নিপীড়ন বন্ধ করে ন্যায়ভিত্তিক, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে একসঙ্গে কাজ করা।” দারিদ্র্যকে শুধু অর্থনৈতিক সমস্যা হিসেবে না দেখে প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক বৈষম্যের ফল হিসেবে তুলে ধরে ২০২৪ সালের এই থিমটি। যদিও ২০২৫ সালের থিম এখনও ঘোষণা করা হয়নি তবে ২০২৫ সালের থিম (প্রত্যাশিত) আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ নির্মাণ সম্পর্কিত হতে পারে।
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মতামতের ভিত্তিতে থিম নির্ধারণ করে “International Committee for October 17”। অসম্মান, অবজ্ঞা ও সুযোগের অভাবেও অনেক সময় দরিদ্র মানুষ নিপীড়িত হয়। প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও নীতিনির্ধারক সকলকে একযোগে কাজ করতে এই থিম সকলকে আহ্বান জানায়, যাতে দরিদ্রদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করা যায়, আইনি-প্রশাসনিক বৈষম্য ও সামাজিক কলঙ্ক দূর হয় এবং একটি ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তোলা যায়। যদিও ২০২৫ সালের থিম এখনও ঘোষণা করা হয়নি তবে ২০২৫ সালের থিম (প্রত্যাশিত) আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ নির্মাণ সম্পর্কিত হতে পারে।
লক্ষ্য ও সচেতনতামূলক বার্তা
এই বছরের লক্ষ্য ও সচেতনতামূলক বার্তা দারিদ্র্য নির্মূল শুধু অর্থনৈতিক উদ্যোগ নয়—it’s also a matter of upholding human rights and dignity, এই নির্দেশটি দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। বার্তা ও আবেদনসমূহ: সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করা সমষ্টিগত উদ্যোগ, দরিদ্রের অভিজ্ঞতা-ভিত্তিক নীতি প্রণয়ন গুরুত্বপূর্ণ, সকলের জন্য ন্যায়সঙ্গত স্বাস্থ্য, আইনি সেবা, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা প্রয়োজন আন্তরিক অন্তর্ভুক্তির জন্যে এবং দারিদ্র্য শুধু আয়‑ঘাটতি নয় — এটি সামাজিক ও প্রশাসনিক বাধার ফল।
মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যসমূহ: ১. গোপন বৈষম্য চিহ্নিত করা, সহমর্মিতা ও অংশীদারিত্বের আহ্বান, SDG 1 (দারিদ্র্য নির্মূল) ও SDG 16 (শান্তি ও ন্যায়) এর সমন্বয়। প্রশাসনিক বাধা, বৈষম্যমূলক নীতি, সামাজিক কলঙ্ক থিমটি দরিদ্রদের কঠিন অবস্থার এসব অংশ “hidden injustice” তুলে ধরে, যাতে তা মোকাবিলা করা যায়। অঙ্গীকার, সকলকেই সমান অধিকার ও সম্মানের ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সামাজিক ও প্রতিষ্ঠানগত নিপীড়ন দূর করা।
কেন দরিদ্রতা একটি বৈশ্বিক সমস্যা?
দারিদ্র্য একটি বৈশ্বিক মানবিক সংকট। বিশ্বে এখনো প্রায় ৭০ কোটি (প্রায় ৮.৭৫%) মানুষ চরম দারিদ্র্যে বাস করে, যা প্রতিদিন $২.১৫ বা তার চেয়ে কম আয়ে জীবনযাপন করছে।। $২.১৫ হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের নির্ধারিত চরম দারিদ্র্যের আন্তর্জাতিক মাপকাঠি (poverty line)।
দারিদ্র্যের কিছু মূল কারণ
দারিদ্র্যের কিছু মূল কারণ রয়েছে, যেমন: বেকারত্ব ও অস্থির শ্রমবাজার, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন, অশিক্ষা ও দক্ষতার অভাব, প্রতিষ্ঠানগত দুর্নীতি ও দুর্বল শাসনব্যবস্থা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, স্বাস্থ্যসেবার অপ্রাপ্যতা, নারীর প্রতি বৈষম্য, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা এবং যুদ্ধ, সংঘাত ও রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি। উন্নয়নশীল দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান থাকে না আবার যদিও থাকে তো মজুরি এত কম হয় যে তা দিয়ে টিকে থাকা সম্ভব হয় না—যাকে “working poor” বলা হয়।
যখন দরিদ্র পরিবারে কেউ অসুস্থ হয় তখন তার চিকিৎসার ব্যয় পরিবারকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেয় এমন অবস্থাকে “health-induced poverty” বলে। প্রাথমিক শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের সুযোগ না পাওয়ায় চাকরি বা আয়মূলক কাজ করতে পারে না অনেক মানুষ, তাই তারা দরিদ্রতাকে কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হয় এবং ধনী ও গরিবের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য ক্রমাগত বাড়ছে, ফলে এক শ্রেণির হাতে সম্পদ জমা হওয়ায় গরিব জনগোষ্ঠী আরও পিছিয়ে পড়ে।
দারিদ্র্যের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব
কেবলমাত্র অর্থনৈতিক দুর্বলতা নয় বরং দারিদ্র্য একটি বহুমাত্রিক সামাজিক সংকট। দারিদ্র পরিবারগুলোতে অনেক সময় শিশুরা স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে কাজ করতে বাধ্য হয়। আর শিক্ষার আলো ছাড়া দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয় তাই তখন দারিদ্র্যের চক্র আরও গভীর হয়। UN-এর মতে, বছরে প্রায় ৫৫ লক্ষ শিশু ৫ বছরের আগেই মারা যায় (২০২৩ রিপোর্ট) চরম দারিদ্র্যের কারণে। কারণ তারা দারিদ্রজনিত কারণে প্রয়োজনে চিকিৎসা নিতে পারে না ফলে শিশু মৃত্যুহার, মাতৃমৃত্যুহার ইত্যাদি বৃদ্ধি পায়। মানব পাচার, মাদক ব্যবসা, চুরি ইত্যাদি বেড়ে যায় কারণ দারিদ্র্যের ফলে অনেক সময় মানুষ অপরাধের পথ বেছে নেয়।
অনেকে চাকরি পায় না বা অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে রয়ে যায় শিক্ষাহীনতা ও দারিদ্র্যের কারণে যার ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় দারিদ্র্যপীড়িত জনগণ দক্ষতা অর্জন করতে পারে না বলে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারে না, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও সীমিত হয় কারণ দরিদ্র দেশের উৎপাদন কম এবং মানসম্পন্ন নয়। শিল্প ও অবকাঠামো এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ কমে যায় যেসব অঞ্চলে দারিদ্র্য বেশি। ফলে বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করে নিরাপত্তা ও চাহিদার অভাব। এছাড়াও দারিদ্র্যের কারণে রাজস্ব আয় হ্রাস ও সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি হয়।
বাংলাদেশে দারিদ্র্য পরিস্থিতি: একটি চিত্র
১৯৯০ দশকে ৯০% থেকে ২০১০ এর মধ্যে চরম দারিদ্র্য ৯%–এ নেমে এসেছে । ২০০৫ সালে যেখানে দারিদ্র্যের হার ছিল প্রায় ৪০%, ২০২২ সালে তা কমে ১৮.৭%-এ নেমে এসেছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) অনুযায়ী।
বাংলাদেশের বর্তমান দারিদ্র্য পরিস্থিতি
জাতীয় দারিদ্র্যের হার ২০.৫%, এবং চরম দারিদ্র্যে থাকা মানুষের হার ৭.৭% ছিলো ২০২৪ সালে, যা যথাক্রমে ২২.৯% ও ৯.৩% পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে ২০২৫ সালে। আরো প্রায় ৩ মিলিয়ন মানুষ অতিরিক্তভাবে চরম দারিদ্র্যে পড়তে পারেন। দেশের নিরীক্ষিত কয়েকটি জেলায় উচ্চ দারিদ্র্য হার শহরে ~২০.৪%, গ্রামীণ এলাকায় ~২৪.৭% পর্যবেক্ষণ করা গেছে, ২০২৪ সালের একটি BIDS‑সর্বেক্ষণ অনুযায়ী। জাতীয় দারিদ্র্য হার প্রায় ১৮.৭% এবং চরম দারিদ্র্য মাত্রা ৫.৬% (গ্রামীণ: ৬.৫%, শহর: ৩.৮%) ছিল ২০২২ সালে।
দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ
সরকারের নেওয়া পদক্ষেপসমূহর মধ্যে অন্যতম: ভিজিএফ (Vulnerable Group Feeding) – দরিদ্রদের বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা, ভিজিডি (Vulnerable Group Development) – দরিদ্র নারীদের খাদ্য ও প্রশিক্ষণ প্রদান, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাত ইত্যাদি। গ্রামীণ এলাকায় প্রশিক্ষণ ও অনলাইন শিক্ষার সুযোগ, প্রাথমিক শিক্ষার বাধ্যতামূলক আইন, বৃত্তিমূলক ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, উপবৃত্তি কর্মসূচি ও বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের মাধ্যমে সকলকে শিক্ষিত করার পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জনগণকে দারিদ্র্যমুক্ত করার প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার।
দারিদ্র্য বিমোচনে এনজিও ও বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা
দারিদ্র বিমোচনে এনজিও ও বেসরকারি সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নারীদের অধিকার সচেতনতা বৃদ্ধি, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও আইনি সহায়তা প্রদান এবং ক্ষুদ্রঋণ, প্রশিক্ষণ ও ব্যবসায়িক সহায়তার মাধ্যমে নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা। ব্র্যাক, আশা, গ্রামীণ ব্যাংক ও প্রোপার মতো এনজিওগুলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে জামানতবিহীন ক্ষুদ্রঋণ দেয়। আবার মেরী স্টোপস, ব্র্যাক, আশা প্রভৃতি সংস্থা পরিবার পরিকল্পনা, মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুর পুষ্টি নিয়ে কাজ করে।
দারিদ্র্য বিমোচনে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ও সফলতা
জাতিসংঘ, বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দারিদ্র্য দূর করতে সাহায্য করছে।
জাতিসংঘ, বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ অন্যান্য সংস্থার ভূমিকা
জলবায়ু সহনশীল, দারিদ্র্য বিমোচন ও গণতান্ত্রিক শাসন উন্নয়নে কাজ করছে UNDP বাংলাদেশসহ ১৭০টিরও বেশি দেশে। বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তা, কারিগরি প্রশিক্ষণ, দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধি করছে “ক্ষমতাবান জীবন, স্থিতিস্থাপক জাতিসমূহ” বা সক্ষম জীবন, দৃঢ় জাতিসমূহ” ("Empowered Lives, Resilient Nations") প্রকল্পের মাধ্যমে। প্রাথমিক শিক্ষা, শিশুশ্রম হ্রাস, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনা করছে United Nations Children’s Fund ও World Food Programme.
কৃষি খাতের আয় বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বিশেষ করে নারীর উদ্যোক্তা কার্যক্রমে বিনিয়োগ করছে বিশ্বব্যাংকের Livelihoods Improvement Projects. এছাড়াও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার দক্ষতা ও কভারেজ বাড়ানো এবং বাংলাদেশে ভিজিডি, ভিজিএফ ও অন্যান্য ভাতা কর্মসূচির উন্নয়নে অর্থায়ন দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের দারিদ্র্য হার কমাতে সহায়ক হয়েছে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG-1)
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG-1) জাতিসংঘ ২০১৫ সালে ঘোষণা করে, যার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের ভারসাম্য রক্ষা এবং বৈষম্য হ্রাস। জাতিসংঘের নির্ধারিত SDG 1-এ ৭টি মূল লক্ষ্য (Targets) ও কিছু সূচক (Indicators) রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে মানুষের চরম দারিদ্র্য দূর করা, দারিদ্র্য হার অন্তত অর্ধেকে নামিয়ে আনা, সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন, দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং আরো কিছু লক্ষ্য রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে SDG 1 অর্জন কঠিন হয়ে উঠেছে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জলবায়ু সহনশীল কৃষি প্রযুক্তি প্রচলন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দরিদ্র দেশগুলোর প্রবেশাধিকার সহজ করলে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।
আমরা কী করতে পারি? (সচেতনতা ও নাগরিক উদ্যোগ)
দারিদ্র মোকাবেলা করা শুধু এনজিও বা সরকারের দায়িত্ব নয়, সাধারণ জনগণের সাহায্য ছাড়া এটি করা কখনো সম্ভব নয়।
ব্যক্তি পর্যায়ে ভূমিকা
ব্যক্তি পর্যায়েও বিভিন্ন ভূমিকা রয়েছে। বেকার যুবকদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ আয়োজন, ক্ষুদ্র ব্যবসার প্রশিক্ষণ, অনলাইন ও অফলাইন দক্ষতা শেয়ারিং কর্মশালা এবং প্রাথমিক পুঁজি সহায়তা প্রদান করতে পারি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ওষুধ, খাদ্য, পোশাক ও আশ্রয় প্রদানের উদ্যোগ এবং গ্রামে বা বস্তিতে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য ক্যাম্পের আয়োজন, ওষুধ, রক্তদান, চিকিৎসা সরঞ্জাম বিতরণ, পুষ্টি, স্বাস্থ্যবিধি ও পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতনতা প্রচার করা। এছাড়াও সমাজভিত্তিক সঞ্চয় ও সহায়তা তহবিল গঠন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিবাচক বার্তা ছড়ানো।
শিক্ষার গুরুত্ব দান
অসচ্ছল পরিবারের শিশুদের পড়াশোনায় সহায়তা করা এবং স্বল্প খরচে বা বিনামূল্যে টিউশনি প্রদান করা যেতে পারে। বই, খাতা, স্কুলের বেতন, ইউনিফর্ম বা অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ কিনে দাওয়া। মন্দির বা কমিউনিটি সেন্টার, গ্রামের মসজিদে সন্ধ্যা স্কুল চালু অথবা অবসর সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা বা প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতা শেখানো। ইন্টারনেট সংযোগের খরচ বহন, পুরনো ট্যাব, ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের দান করা যাতে তারা অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে পারে।
উপসংহার
এই পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষেরই সম্মানজনক জীবনযাপন করার অধিকার রয়েছে যা ১৭ অক্টোবর আমাদের মনে করিয়ে দেয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিজ্ঞা – “কেউ যেন পেছনে পড়ে না থাকে। তাই দারিদ্র্য মুক্ত বিশ্ব গড়তে এই দিবসটি আমাদের সহায়তা করে।
আশা করি আজকের এই আলোচনা থেকে আপনি দারিদ্র্য বিমোচন সচেতনতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। আসুন, আমরা সবাই মিলে দরিদ্রতা দূরীকরণে এগিয়ে আসি এবং একটি ন্যায়সঙ্গত ও সমৃদ্ধ বিশ্ব গঠনে অবদান রাখি। এ ধরনের আরও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
ফ্রিল্যান্সিং এক্সপ্রেস ইন্সটিটিউটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url