তুলসী পাতার ৮টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও সঠিক ব্যবহারের উপায়

আপনি কি জানতে চান তুলসী পাতার ৮টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কেননা আজকের আর্টিকেলটিতে তুলসীর স্বাস্থ্যগুণ সম্পর্ককে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাই ওষুধি গাছ তুলসীর উপকার সম্পর্কে জানতে হলে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
সবুজ পাতাযুক্ত তুলসী গাছের ছবি – তুলসী পাতার উপকারিতা
নিচে আপনাদের জন্য তুলসী পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যেখান থেকে আপনি খুব সহজেই তুলসী পাতার ৮টি স্বাস্থ্য উপকারিতা জানতে পারবেন। তাই দেরি না করে প্রাকৃতিক হার্বাল প্রতিকার হিসেবে তুলসীর গুণ সম্পর্কে জেনে নিন।

ভূমিকা

তুলসী (Ocimum sanctum) একটি পরিচিত ওষুধি গাছ, যা প্রাচীনকাল থেকেই ঘরোয়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর পাতা, মূল ও বীজে রয়েছে স্বাস্থ্যকর গুণাগুণ। মানব দেহের বিভিন্ন প্রাকৃতিক রোগ নিরাময় করতে ব্যবহার হয় ও মানসিক শান্তির কার্যকরী ঔষধ। শরীর ও মন দুটোই সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে তুলসী পাতা। চলুন জানি তুলসী পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা ও ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

তুলসী পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা

তুলসিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জিঙ্ক ও ভিটামিন C জিঙ্ক শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস ও ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে কাজ করে। সর্দি-কাশি,ইনফ্লুয়েঞ্জা, গলা ব্যথা ইত্যাদির উপশম করে তুলসী পাতার রস। শ্বাসকষ্টে, ব্রঙ্কাইটিস, সাইনাস, হাঁপানি রোগ নিরাময় এ তুলসী অত্যন্ত উপকারী। শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখে তুলসীর পাম্প। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে তুলসী কোলেস্টেরল। মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে ওষুধি গাছ তুলসী থাকা উপাদান কর্টিসল হরমোন। ইনসুলিন নিঃসরণে করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

দাঁতের ব্যথা, মাড়ির রক্তপাত, মুখের দুর্গন্ধ ও ব্যথা দূর হয় বাসিল পাতার রস (Tulsi) ব্যবহার করা হয়। ত্বকের অ্যালার্জি, ব্রণ, একজিমা দূর করতে সাহায্য করে। খুশকি কমায় হার্বাল তুলসী তেল ও তুলসী রস চুলপড়া রোধ করে। গ্যাস্ট্রিক, অম্বল ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও হজমশক্তি উন্নত করে তুলসী। দেহের ভিতরে ও বাইরে জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে তুলসীতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল উপাদান। তুলসীতে থাকা বৈশিষ্ট্য অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ত্বকের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে ও ব্রণ চুলকানি দূর করে। ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দিতে দেয় তুলসীতে থাকা ফাইটোকেমিক্যালস। বিশেষ করে ফুসফুস ক্যান্সার ত্বক ক্যান্সার এর ক্ষেত্রে। তুলসী রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে তুলসীতে থাকা কোলেস্টেরল মানসিক চাপ কমায়।

সর্দি-কাশি ও ঠান্ডা দূর করতে সহায়ক

তুলসী পাতায় রয়েছে অ্যান্টি-ভাইরাল ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা ঠান্ডা-কাশি কমাতে সাহায্য করে। তুলসীর পাতাতে থাকা ঔষধি নিয়মিত ব্যবহার করলে ঠান্ডা, কাশি ও গলা ব্যথা উপশমে দারুণ কার্যকর হয়। ঘরোয়া উপায়ে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াবিহীন সস্তা ও সহজলভ্য প্রতিকার।
  • কাশি কমায়ঃ আদার রস,মধু ও তুলসী পাতার নির্যাস একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে কাশি কমে। তুলসী পাতা শরীরের ভিতরে থাকা কফ নরম করে শরীর থেকে বের করতে সাহায্য করে। 
  • শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ কমায়ঃ শ্বসনতন্ত্রের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে তুলসীতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান । 
  • জ্বর‌ কমায়ঃ গরম পানিতে তুলসী পাতা ও এলাচ ফুটিয়ে খেলে জ্বর কমাতে সাহায্য করে। তুলসীর পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়। রক্তে থাকা দূষিত উপাদান (toxins) বের করতে সাহায্য করে তুলসী। রক্ত পরিষ্কার রাখতে নিয়মিত তুলসী সেবন করতে হবে। নিয়মিত তুলসী সেবনে ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন: গ্যাস, অম্বল ও পেট ফাঁপার মতো সমস্যা তুলসী পাতা অনেক কার্যকরী। এটি পাকস্থলীর এনজাইম নিঃসরণ বাড়ায় যার ফলে খাবার দ্রুত হজমে সাহায্য করে।

দেহ ও মনের উপর মানসিক চাপের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে তুলসীতে থাকা অ্যাডাপ্টোজেন।মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ওডোপামিন ও মনকে ভালো রাখার কেমিক্যাল” নিঃসরণে সাহায্য করে। তুলসী পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। সাইনাস, ব্রঙ্কাইটিস , হাঁপানি ক্ষেত্রে তুলসীর চা বা বাষ্প অধিক কার্যকরী। তুলসীর পাতা চিবালে মুখের থাকা ব্যাকটেরিয়া দূর করে ও মুখের মাড়ির জন্য অত্যন্ত উপকারী। তুলসীর রস নিয়মিত খাওয়ার আগে ডাক্তার এর পরামর্শ নিতে হবে কারন তুলসী রক্ত পাতলা করতে পারে যারা বিশেষ করে যারা Anticoagulant ঔষধ খান। এছাড়া গর্ভবতী নারীর তুলসীর রস খাবার আগে অবশ্যই ডাক্তারের এর পরামর্শ নিতে হবে।

তুলসী পাতার ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি

তুলসীর পাতা ব্যবহারের পূর্বে ভালো ভাবে ধুয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নিতে হবে যাতে কোন রোগ জীবাণু না থাকে।সকালে খালি পেটে ৫-৭টি তাজা তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। পাত্রে গরম পানি ফুটিয়ে অর্ধেক করে তার মধ্যে তুলসীর পাতা দিয়ে চা বানিয়ে পান করলে (এক কাপ গরম পানিতে ৪-৫টি পাতা) সর্দি-কাশি ,গলা ব্যথা জ্বর কমে। এছাড়া তুলসীর রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে সর্দি -কাশি ভালো হয়। ফুটন্ত পানিতে তুলসীর পাতা দিয়ে ও মধু দিয়ে ভালো ভাবে সেদ্ধ করে নিয়ে খেলে( সর্দি ও নাক বন্ধ) জন্য অধিক উপকারী।

গোসলের সময় পানিতে তুলসীর পাতা দিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ব্রণ ,চুলকানি জন্য আক্রান্ত স্থানে তুলসীর পাতা বেটে প্রয়োজনীয় মধু ও নিম পাতা দিয়ে রাখতে হবে। হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে চা সা তুলসীর পাতা মিশিয়ে খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। চুলের যত্নে তুলসীর পাতা ব্যবহার করা হয়। ত্বক সুন্দর ও মসৃণ করতে তুলসীর পাতা বেটে ত্বকে লাগানো হয়। মানসিক চাপ মোকাবেলায় সাহায্য করে তুলসী পাতায় থাকে অ্যাডাপ্টোজেন নামক উপাদান মানসিক চাপ কমায়। প্রতিদিন সকালে ৩-৫টি তাজা তুলসী পাতা চিবিয়ে খাইতে হবে। মনোযোগ বৃদ্ধিতে হালকা গরম পানিতে তুলসী পাতা চা বানিয়ে পড়াশোনা করতে করতে পান করুন এতে পড়াশোনায় মনোযোগ ভালো আসে। ঘুমের সমস্যা (Insomnia) দূর করতে রাতে শোবার পূর্বে তুলসীর পাতা দিয়ে চা বানিয়ে খান এতে ঘুম ভালো হবে।

তুলসী পাতা ও নিম পাতার রস পরিমাণ মতো মিশিয়ে খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য হয়। কপালে তুলসীর পাতার রস দিয়ে মাসাজ করলে মাথাব্যথা ও মাইগ্ৰেন ভালো হয় । এছাড়া তুলসীর পাতা ও আদা চা বানিয়ে খাইলেও মাথাব্যথা কমে । তুলসী পাতার রস তার সাথে মধু মিশিয়ে খেলে কিডনি পরিষ্কারে সাহায্য হয় কিডনির পাথর ক্ষয় হতে অনেকটাই সাহায্য করে। তুলসী পাতার রস পানিতে সঙ্গে মিশিয়ে কুলকুচি করতে হবে অথবা তুলসীর পাতা চিবালে মুখের ঘা ও গন্ধ চলে যাবে ।

তুলসীর অপকারিতা:

তুলসী পাতাতে প্রাকৃতিকভাবে রক্ত পাতলা করার বৈশিষ্ট্য থাকে যা রক্ত পাতলা করে দিতে পারে। এই ওষুধ যারা খাচ্ছে তাদের জন্য রক্ত ক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ে ।

  • গর্ভাবস্থায় সতর্কতাঃ তুলসী গর্ভবতী মহিলাদের অতিরিক্ত সেবন না করাই ভালো, কারণ জরায়ু সংকোচন ঘটাতে পারে এবং তুলসীর বীজ গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।
  • হরমোন ভারসাম্যহীনতাঃ দীর্ঘদিন তুলসী খাওয়ার শরীরের বিশেষ প্রজনন হরমোন ভারসাম্যের প্রভাব ফেলতে পারে । 
  • রক্তচাপ ও রক্তশর্করার ওপর প্রভাবঃ তুলসী ব্লাড সুগার ও তুলসী রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে ,তবে যারা ইতোমধ্যে ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রভাব পড়বে,ফলে হাইপোটেনশন বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।
  • অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়াঃ কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে তুলসী ত্বকে বা শরীরে অ্যালার্জিক সৃষ্টি করতে পারে—যেমন ফুসকুড়ি, চুলকানি, ইত্যাদি।

উপসংহার

তুলসী একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক ঔষধ, নিয়মিত ব্যবহার করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । তুলসী পাতার স্বাস্থ্যগুণ অসাধারণ, তবে অতিরিক্ত ব্যবহার না করে প্রতিদিন পরিমাণমতো গ্রহণ করাই উত্তম।

আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি তুলসী পাতার উপকারিতা ও সঠিক ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। এ ধরনের আরও স্বাস্থ্য ও হার্বাল টিপস পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্রিল্যান্সিং এক্সপ্রেস ইন্সটিটিউটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url