বর্ষাকালে ত্বক ও চুলের যত্ন: ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক উপায়

আজকের লেখায় আমরা বর্ষাকালে ত্বক ও চুলের সাধারণ সমস্যাগুলোর কারণ এবং সেগুলোর ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। বর্ষাকালে সৌন্দর্যচর্চায় কিছু বাড়তি যত্ন নেওয়া জরুরি হয়, বিশেষ করে ত্বক ও চুলের জন্য। তাই পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে আপনি পাবেন প্রয়োজনীয় সব টিপস ও টেকনিক।
বর্ষাকালে ঘরে দাঁড়িয়ে এক তরুণী ভেজা চুলে চিরুনি করছে, প্রাকৃতিক ত্বক ও চুলের যত্ন নিচ্ছে
নিচে আপনাদের জন্য বর্ষাকালের ঋতুতে ঘরোয়া রূপচর্চার সহজ কিছু টিপস তুলে ধরা হয়েছে। যেখান থেকে আপনি খুব সহজেই বর্ষাকালে ত্বক ও চুলের যত্ন নেওয়ার প্রাকৃতিক উপায় জানতে পারবেন। তাই দেরি না করে আর্টিকেলটি সর্ম্পূন পরুন।

ভূমিকা

বর্ষাকাল হচ্ছে বাংলা বছরের দ্বিতীয় ঋতু যা আষাঢ়-শ্রাবণ মাস জুড়ে থাকে। এটি সৌন্দর্যের ঋতু হলেও এই ঋতুতে ত্বক ও চুলের জন্য কিছুটা অতিরিক্ত যত্ন প্রয়োজন।

বর্ষাকালে ত্বক ও চুলের সমস্যা কেন বাড়ে?

বৃষ্টির পানি ও ধুলাবালি এবং অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে বর্ষাকালে ত্বক ও চুলের বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দেয়। চুল পড়া, মাথায় খুশকি হওয়া এবং ব্রণ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায় ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে। সূর্যের আলোয় ভিটামিন D থাকে যেটি ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্ষাকালে সূর্যের আলো কম পাওয়া যায় যার ফলে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে। শরীরের বিভিন্ন ভাঁজে (যেমন: পায়ের আঙুলের ফাঁকে, গলা, কনুই) ঘাম জমা হয়ে ত্বকে দুর্গন্ধ বা চুলকানির সৃষ্টি হয় এবং ছত্রাকজনিত সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে কারণ বর্ষাকালে ঘন ঘন ঘাম হয়।

বর্ষাকালে অনেকেই মাথা ও চুল ভেজা রেখেই শুকাতে দেয় আবার অনেকেই ভেজা কাপড় বেশিক্ষণ পড়ে থাকে এবং নিয়মিত মুখ বা মাথার ত্বক পরিষ্কার করে না। ফলে ত্বকে ব্রণ বা চুলকানির এবং চুল পড়ার সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। বৃষ্টির পানি অনেক সময় বিশুদ্ধ নাও হতে পারে তাই বৃষ্টির পানিতে ভিজলে ত্বকে চুলকানি, ছত্রাকজনিত ইনফেকশন এবং চুলে সংক্রমণ, খুশকি ও চুল পড়া বাড়তে পারে। বর্ষাকালের পরিবেশ- যেমন বাতাসে আর্দ্রতার পরিমান বেশি হওয়ার ফলে চুল বেশি আদ্র হয়ে নরম ও দুর্বল হয়ে সহজে ভেঙ্গে যায়।এক কথায় সূর্যরশ্মির অভাব, জীবাণুযুক্ত পানি ও ঘাম এগুলো মিলে চুল ও ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি করে।

ত্বকের যত্নে ঘরোয়া কার্যকর টিপস

বর্ষাকালে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় এই সমস্যাগুলো ঘরোয়া উপায়েই অনেক ভালোভাবে সমাধান করা যায়। তাই ত্বককে সুস্থ, সতেজ ও সংক্রমণ মুক্ত রাখতে বেশি দামি কসমেটিক্সের প্রয়োজন হয় না।

অয়েল-ফ্রি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন

তেলজাতীয় উপাদান -যেমন কোকোনাট অয়েল মিনারেল অয়েল ইত্যাদি থাকে না অয়েল-ফ্রি ময়েশ্চারাইজার, যার ফলে এটি ত্বকে আর্দ্রতা দেয় ঠিকই কিন্তু অতিরিক্ত তেল যুক্ত করে না। এটি ত্বকের রোমছিদ্র বন্ধ করে না তাই যাদের ত্বক অয়েলি তাদের জন্য এটি সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। এটি মিশ্র (combination) ত্বকের জন্য উপযোগী, তৈলাক্ত (oily) ত্বকের জন্য খুবই উপযোগী এবং সংবেদনশীল (sensitive) ত্বকের জন্য হালকা ফর্মুলা উপকারী তবে শুষ্ক (dry) ত্বকের জন্য এটি কম উপযোগী বা উপযোগী নয় বললেই চলে।

ভারী ময়েশ্চারাইজার আদ্র আবহাওয়ায় মুখে ঘাম সৃষ্টি করে যা ব্রণের কারণ হতে পারে তবে অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার হালকা তাই এটি ব্যবহার করলে ঘাম সৃষ্টি হওয়ার কোন কারণ নেই।এটি ব্যবহারের নিয়ম: প্রথমে মুখ ধুয়ে পরিষ্কার করে ত্বক টোনার (যদি ব্যবহার করেন) লাগিয়ে ত্বক প্রস্তুত করতে হবে, এবার পরিমাণ মতো অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার নিয়ে মুখে ভালোভাবে লাগাতে হবে। যদি বাইরে যান তবে এরপরে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

অ্যালোভেরা বা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করুন

বিভিন্ন ধরনের কসমেটিক্স ব্যবহারের চাইতে অনেক বেশি ভালো হয় ত্বকে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানের বিভিন্ন গুণ রয়েছে যা আমাদের ত্বককে সুস্থ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে। যেমন: অ্যালোভেরা জেল, নিম, চন্দন, দই, বেসন, টমেটো, মুলতানি মাটি, শসা ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদানগুলো আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এসব উপাদান সপ্তাহে দু তিন দিন ব্যবহার করলেই ভালো ফল পাওয়া যায়। অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি রয়েছে অ্যালোভেরারই যা ত্বকের চুলকানি ও ছত্রাক প্রতিরোধে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা জেল ফোস্কা, ব্রণ  এবং রোদের পোড়া ত্বকে আরাম দেয়, ত্বককে ঠাণ্ডা রাখে এবং হালকা ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।

অ্যালোভেরা জেল বিভিন্ন উপাদানের সাথে মিশিয়ে মুখের প্যাক হিসেবে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। তাজা এলোভেরার পাতার ভেতরের জেল বের করে রাতে ঘুমানোর আগে লাগিয়ে রেখে দেওয়া যায় অথবা লাগানোর পরে ১৫-২০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হয়। গোলাপ জল ও মুলতানি মাটির প্যাক ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ত্বককে ঠাণ্ডা করে গোলাপ জল, রোমছিদ্র পরিষ্কার রাখে এবং ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে মুলতানি মাটি। ২ চামচ মুলতানি মাটিতে অল্প পরিমাণে গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে ও গলায় ১৫ মিনিট রেখে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বককে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে বেসন, কারণ এটি একটি প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েন্ট।

স্কিন টোনার ভারসাম্য রাখে এবং ত্বকের পিগমেন্টেশন বা দাগ হালকা করে টমেটো। শশা চোখের নিজের কালো দাগ হালকা করে ফুসকুড়ি বা চুলকানিতে আরাম দেয় এটি দিনে একবার ব্যবহার করলেই উপকার পাওয়া যায়। তবে যেকোনো প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের পূর্বে ত্বকের এক কোণে তা লাগিয়ে দেখতে হবে কোন এলার্জি হয় কি না এবং ত্বককে সুস্থ রাখতে রাসায়নিক যুক্ত প্রসাধনী কম ব্যবহার করা উচিত।

বর্ষাকালে চুল পড়া রোধে করণীয়

চুল পড়ে যাওয়ার ঘটনাটি বর্ষাকালের একটি সাধারণ ঘটনা তবে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। যেমন: নিয়মিত শ্যাম্পু করে চুল পরিষ্কার রাখা,তেল ব্যবহার করা এবং ঘরোয়া হেয়ার প্যাক ব্যবহার করা ইত্যাদি এগুলো সঠিকভাবে মেনে চললে চুল পড়া রোধ করা সম্ভব।

নিয়মিত শ্যাম্পু ও হালকা তেল ব্যবহার

খুশকি, চুল পড়া, অতিরিক্ত তেলতেল ভাব ইত্যাদি সমস্যাগুলো হয় বর্ষাকালের আর্দ্রতার জন্য। তাই নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুল পরিষ্কার থাকে এবং চুলের আবদ্ধ ময়লা দূর করতে এটি সাহায্য করে। শুষ্কতা ও রুক্ষতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, চুলের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং চুল নরম ও মসৃণ থাকে বর্ষাকালে হালকা তেল ব্যবহার করলে। সালফেট বা প্যারাবেন মুক্ত শ্যাম্পু বেছে নিন যা চুলের প্রাকৃতিক তেল কেড়ে নেবে না। হালকা বা হার্বাল শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। এটি সপ্তাহে অত্যন্ত ২-৩ বার ব্যবহার করতে হবে এবং শ্যাম্পুর পরে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে যাতে চুল শুষ্ক না হয়ে পড়ে। ফলে অতিরিক্ত ময়লা, তেল ও অন্যান্য দূষণকারী পদার্থ দূর হয়।

তবে খেয়াল রাখতে হবে যে হালকা বা হার্বাল শ্যাম্পুতে সালফেট বা প্যারাবেন আছে কিনা তাই ‘প্যারাবেন ফ্রি’ বা ‘সালফেট ফ্রি’ লেভেল যুক্ত শ্যাম্পু বেছে নিতে হবে। এছাড়াও অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ ফর্মুলা (যদি খুশকি হয়), অ্যালোভেরা, নিম বা আমলকি যুক্ত শ্যাম্পু বর্ষাকালে ব্যবহার করা ভালো। হালকা তেল চুলের গোড়ায় পুষ্টি যোগায়, চুল মজবুত করে, শুষ্কতা ও চুলকানি কমায়, ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে, চুলকে নরম ও মোলায়েম রাখে, মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, চুল পড়া কমায় এবং চুলের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তেল লাগানোর পূর্বে হালকা গরম করে নিয়ে মাথার ত্বকে আলত করে ম্যাসাজ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল ও চুলের গভীরে পুষ্টি পৌঁছে দেয় নারকেল তেল যা একটি জনপ্রিয় হালকা তেল এবং চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বাদাম তেল (আমন্ড অয়েল) ভিটামিন E সমৃদ্ধ, চুলে ঝলক ও নমনীয়তা আনে এবং জোজোবা তেল (অর্গান অয়েল) চুলের প্রাকৃতিক তেলের মতই, এটি খুব হালকা ও স্ক্যাল্প-ফ্রেন্ডলি হওয়ায় ত্বকে চিটচিটে ভাব রাখে না। এছাড়াও অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যযুক্ত টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।

ভেজা চুলে ঘরোয়া হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন

আর্দ্র বা তোয়ালে দিয়ে মোছা চুলে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করলে সেটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয় কারণ এই সময় শুকনো চুলের তুলনায় প্যাক মসৃণ ভাবে লাগানো যায়, হেয়ার প্যাক সহজে চুলের সাথে লেগে থাকে এবং চুলের কিউটিকল খুলে থাকে বলে উপাদান প্রবেশ করতে সুবিধা হয়। ভেজানো মেথি বেটে তাতে ২ টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে একটি হেয়ার প্যাক বানিয়ে ২০-৩০ মিনিট স্ক্যাল্পে রেখে ধুয়ে ফেলুন, খুশকি ও চুল পড়া রোধে সহায়ক। রুক্ষ ও শুষ্ক চুলের জন্য আদর্শ কলা ও মধুর হেয়ার প্যাক। ১টি পাকা কলার সাথে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে ৩০ মিনিট রাখার পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

চুলে প্রোটিন যোগায় ও চুল মজবুত করে ডিম ও অলিভ অয়েল প্যাক, এই প্যাকটি ২০ মিনিটে রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। অ্যালোভেরা ও নারকেল তেলের প্যাক পুরো চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন এটি স্ক্যাল্প ঠাণ্ডা রাখে ও চুলকে মসৃণ করে। সপ্তাহে ১-২ বার ঘরোয়া হেয়ার প্যাক ব্যবহার করলে ভালো পাওয়া যায়। এ কথা মনে রাখতে হবে যদি তেল চুলের খাবার হয় তবে হেয়ার প্যাক হচ্ছে চুলের সার। তাই তেল দেওয়ার পাশাপাশি চুলে ঘরোয়া হেয়ার প্যাক দেওয়াটাও প্রয়োজন। এটি নতুন চুল গজাতে, চুল পড়া কমাতে, চুলের গ্রোথ বৃদ্ধি করতে এবং চুলকে মসৃণ, চকচকে ও আকর্ষণীয় করতে সাহায্য করে।

খাদ্যাভ্যাস ও হাইড্রেশনের গুরুত্ব

বর্ষাকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও হজম শক্তি কমে যায়। তাই হালকা, পরিমিত ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে সংক্রমণ এড়াতে সাহায্য করবে। শরীরে ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি হলে ত্বক রুক্ষ ও চুল দুর্বল হয়ে যায়। তবে সঠিক খাদ্যাভাস ত্বক ও চুলের গভীর থেকে পুষ্টি দেয়। প্রোটিন (মাছ,ডিম,ডাল), ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার (কমলা, আমলকি, লেবু), অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার (চিয়া/ফ্লাক্স,গ্রিন টি), তাজা শাকসবজি ও ফল (টমেটো, গাজর, আপেল, পেঁপে) এবং হালকা তেলমসলা যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত বর্ষাকালে। কোল্ড ড্রিংকস ও কৃত্রিম চিনি, রাস্তার খাবার ও নিম্নমানের ফল এবং অতিরিক্ত তেল যুক্ত ভাজা খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

পানি কম পান করা হলে শরীরের ভেতরে জলীয় ঘাটতি দেখা দিতে পারে। অনেকেই বর্ষাকালে আবহাওয়া গরম থাকে না বা ঘাম কম হয় দেখে পানি কম পান করে। পানি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় এবং হজম ও রক্ত চলাচল ভালো রাখে। ত্বককে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখে ও ব্রণ কমায় এবং চুলের গোড়া পর্যন্ত পুষ্টি পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। তাই দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। চাইলে ডাবের পানি, ফলের রস (চিনি ছাড়া), লেবু জল খেতে পারেন। প্রতিদিন ১ গ্লাস কুসুম গরম পানি সকালে ঘুম থেকে উঠে খাওয়ার অভ্যাস করলে ত্বকের ও হজমের উপকার হয়।

যেসব ভুল বর্ষাকালে একেবারে করা উচিত নয়

চুলের প্রয়োজন অনুযায়ী তেল ব্যবহার করতে হবে। চুলের প্রয়োজনের বেশি তেল দিলে চুল পড়া বন্ধ না হয়ে আরো বেশি চুল পড়তে পারে এবং চুলে তেল দিয়ে কখনোই ২৪ ঘন্টা রাখা উচিত নয় তাতে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়। তেল দিয়ে ৫-৬ ঘন্টা রাখলেই যথেষ্ট। তারপর শ্যাম্পু করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে যেন চুলে তেল লেগে না থাকে এবং এরপর কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুল শুষ্ক হয় না।

চুলে প্রতিদিন তেল দেওয়া উচিত নয় সপ্তাহে ২-৩ দিন দিলেই যথেষ্ট, কারণ প্রতিদিন চুলে তেল দিলে প্রতিদিন শ্যাম্পু করতে হয় ফলে চুলের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার বর্ষাকালে অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করলে মাথার ত্বক আরো তৈলাক্ত হতে পারে ফলে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে। সব থেকে বড় কথা তেল দিয়ে কখনোই চুল আঁচড়ানো উচিত নয়। তাই তেল দেওয়ার পূর্বে চুলের জট ভালোভাবে ছাড়িয়ে নিতে হয়।চুল ভেজা থাকা অবস্থায় রোদ, ধুলাবালি ও বাতাসে গেলে চুল পড়ে, ফেটে যায় ও সংক্রমণও হতে পারে কারণ এই সময় চুল দুর্বল থাকে। ব্রণ ও ত্বকের রুক্ষতা বেড়ে যেতে পারে রাতে মুখ না ধুয়ে ঘুমালে কারণ দিনভর তেল, ঘাম ও ধুলাবালি মুখে জমে থাকে।

বর্ষাকালে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে যদি ভেজা পা সঙ্গে সঙ্গে ভালোভাবে মুছা না হয়, বিশেষ করে এটি পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আবার অনেকেই মনে করে এ সময় ময়েশ্চারাইজার দরকার নেই, তবে এটি একটি ভুল ধারণা। এসময় অবশ্যই একটি হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা দরকার ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে।

উপসংহার

বর্ষাকালে ত্বক ও চুল সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখতে প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায়ে নিয়মিত যত্ন নিলেই হয়। রাসায়নিক পণ্যের ব্যবহার আমাদের চুল ও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। তাই এগুলোর ব্যবহার বন্ধ করে প্রকৃতিকে সঙ্গী করলে স্বাস্থ্যকর ও সুস্থ ভাবে বাঁচা যায়।
আশা করি বর্ষাকালে ত্বক ও চুলের ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক যত্ন নিয়ে এই লেখাটি আপনার উপকারে আসবে। এই মৌসুমে স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য ধরে রাখতে নিয়মিত যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আপনি যদি এ ধরনের আরও স্বাস্থ্য ও রূপচর্চাবিষয়ক তথ্যবহুল আর্টিকেল পড়তে চান, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্রিল্যান্সিং এক্সপ্রেস ইন্সটিটিউটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url