ইসলাম ধর্মের শিক্ষা ও আধুনিক জীবনে এর প্রভাব

আজকের লেখায় আমরা দেখব ইসলাম ধর্ম কী শিক্ষা দেয় এবং আধুনিক সমাজে তার প্রভাব কেমন। আজকের আর্টিকেলে ইসলামী জীবনব্যবস্থা, ধর্মীয় শিক্ষা, আধুনিক সমাজে ইসলাম, ইসলামের প্রভাব সকল বিষয়ে আলোচনা করা হবে। তাহলে ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলো এবং তার আধুনিক সমাজে প্রয়োগ বুঝতে হলে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
মসজিদ, কুরআন এবং আধুনিক শহরের পটভূমিতে ইসলাম ধর্মের শিক্ষা ও শান্তির প্রতীকী ছবি
নিচে আপনাদের জন্য ইসলাম ধর্মের শিক্ষা ও আধুনিক জীবনে এর প্রভাব: একটি বিশ্লেষণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যেখান থেকে আপনি খুব সহজেই ইসলাম ধর্মের শিক্ষা ও আধুনিক জীবনে এর প্রভাব: একটি বিশ্লেষণ জানতে পারবেন। তাই দেরি না করে ইসলাম ধর্মের শিক্ষা ও আধুনিক জীবনে এর প্রভাব: একটি বিশ্লেষণ সম্পর্কে জেনে নিন।

ভূমিকা

ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি। ইসলাম এমন একেশ্বরবাদী ধর্ম যার মূল অর্থ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই, আর কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (স:) হলো আল্লাহর নবী ও রাসূল। ইসলামের পথে জীবন ব্যবস্থা করলে মানুষের মধ্যে শান্তি, মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি হবে।

ইসলাম ধর্মের ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠা

মহানবী (স:) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে, আরবের মক্কায় কুরাইশ বংশে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা:আব্দুল্লাহ, মাতা: আমিনা, দাদা: আব্দুল মুত্তালিব, এবং দুধ মাতা: হালিমা। জন্মের আগে মহানবী মুহাম্মদ (সঃ) এর বাবা ইন্তেকাল করেন এবং ৬ বছর বয়সে মা ইন্তেকাল করেন। তিনি “আল-আমিন” নামে পরিচিত ছিলেন।

তিনি ২৫ বছর বয়সে ব্যবসায়িক কাজের সূত্রে বিবি খাদিজা (রা.)-এর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ৪০ বছর বয়সে হেরা গুহায় ধ্যানরত অবস্থায় তিনি নবুওয়ত লাভ করেন। এর পর থেকে তিনি মক্কার মানুষদের তাওহিদের দাওয়াত দিতে থাকেন। মূর্তিপূজা, অবিচার, সুদ প্রথা, নারী অবমাননার বিরুদ্ধে তিনি সংগ্রাম করেন, কুরাইশরা নানা ভাবে বাধা দেয়। মক্কার অবস্থা সহনীয় না হওয়ায় ৬২২ খ্রিস্টাব্দে তিনি মদিনায় হিজরত করেন। এই হিজরত থেকেই হিজরী সন গণনা শুরু।

ইসলাম রক্ষা ও প্রতিষ্ঠার জন্য বদর, উহুদ, খন্দকের সঙ্গে বিভিন্ন যুদ্ধ করতে হয়। তিনি শান্তির সাথে ইসলাম প্রচার করেন। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে কোনো রক্তপাত ছাড়াই মক্কা বিজয় করেন। ১০ হিজরি সালে তিনি বিদায় হজ পালন করেন এবং ঐতিহাসিক “বিদায় হজের ভাষণ” দেন, যেখানে মানবাধিকার, নারী অধিকার ও সমতা বিষয়ে গুরুত্ব দেন। ৬৩ বছর বয়সে, ১১ হিজরি সালের ১২ রবিউল আউয়াল, সোমবার মদিনায় ইন্তিকাল করেন। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ছিলেন সর্বশেষ নবী এবং সমগ্র মানবজাতির জন্য রহমত। তার জীবন ও চরিত্র অনুসরণ করলেই একজন মানুষ প্রকৃত ন্যায়ের পথে চলতে পারে।

ঈমানের বিষয় ও স্তম্ভসমূহ

ঈমান অর্থ বিশ্বাস আর তাকওয়ার শব্দের অর্থ রক্ষা পাওয়া। তাকওয়ার হলো আল্লাহ তায়ালা কে ভয় করে তার আদেশ-নিষেধ মান্য করা। ইমান হলো আল্লাহ তায়ালা, নবী, রাসুলগণ, আল্লাহ তায়ালার কিতাব, ভাগ্য, পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। আর তাকওয়ার হলো আল্লাহ তায়ালা কে ভয় করে আল্লাহর দেওয়া আর্দেশ মেনে জীবন যাপন করা। আল্লাহ তায়ালা সনতুষ্ট লাভের জন্য তার বিধান মান্য করা। “আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্লাহ” বাংলা অর্থ: "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল।
দিনে পাঁচবার সালাত আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। এটি মুসলমানের প্রতিদিন ইবাদতের প্রধান অংশ হিসেবে কাজ করে। ধনী মুসলমানদেরকে প্রত্যেক গরিবদের যাকাত প্রদান করতে হবে এতে ধনী গরিব মধ্যে সম্পর্ক গভীর হয়। গরিব রা নিজেরদের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে পারে প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানদের উচিত জীবনে অন্তত একবার মক্কায় গিয়ে হজ পালন করা।‌ কারণ ধনিদের জন্য আল্লাহ রব্বুল আলামিন এটি বাধ্যতামূলক/ফরজ করেছেন।

ইসলামী ধর্মগ্রন্থ ও তাদের গুরুত্ব

ইসলামের মূল ভিত্তি হলো কুরআন আর হাদিস হলো কুরআনকে পরিপূর্ণভাবে করে প্রতিষ্টা করে। কুরআন হলো আল্লাহর কথা বানী আর কুরআন কথা আদেশ-নিষেধ ইসলামে কী ভাবে জীবন ধারণ করতে হয় হাদিস দিয়ে হলো নবী রাসুলগণরা বুঝিয়েছেন। কুরআন ও হাদিস একে অপরের পরিপূরক। ইসলামের পরিপূর্ণ বিধান হলো শরীয়াহ যা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগত হয়েছে আর ফিকহ হলো শরীয়াহর ব্যাখ্যা, প্রয়োগ ও আইন যা ইসলামী বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে বের করে ।শরীয়াহ গঠিত হয় ঈমান, ইবাদত, সামাজিক নিয়ম কানুন, শাস্তি, বিচার ব্যবস্থা ইত্যাদি। ফিকহ হলো কীভাবে ইবাদত করতে হয়, সমাজে কীভাবে চলতে হয়, পারিবারিক আইন মেনে চলা, অপরাধ সাক্ষ, বিচার ব্যবস্থা।

ইসলামী উৎসব ও পালনীয় দিনসমূহ

ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা মুসলমানের দুটি মহান ধর্মীয় উৎসব। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা এই দুই ঈদ মুসলমানদের আনন্দ , ত্যাগ, ইবাদত এর প্রতিক এছাও রয়েছে রোজা/সিয়াম পালন করা।

ঈদুল ফিতরঃ ফিতর শব্দের অর্থ হলো ইফতার বা রোজা ভাঙা। রমজান মাসে দীর্ঘ একমাস আল্লাহ তায়ালা আদেশে রোজা/সিয়াম পালনের পরে শাওয়াল মাসে প্রথম দিন ঈদুল ফিতর এর দুই রাকআত ওয়াজিব সালাত আদায় করা হয় ।

ঈদুল আজহাঃ “আজহা” শব্দের অর্থ: কুরবানি করা বা পশু জবাই করা। বিশ্বের সকল মুসলমান যিলহজ মাসের ১০ তারিখ (আরাফার দিনের পরদিন) পশু জবাই করার মধ্যে ঈদুল আজহা পালন করে থাকে। আল্লাহর নবী হযরত ইব্রাহিম (আ:) আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ এ তার পুত্র হযরত ইসমাইল (আ:) কে কুরবানি করার জন্য প্রস্তুত করলে আল্লাহ রব্বুল আলামিন খুশি হয়ে আল্লাহর কুদরতি ক্ষমতায় হযরত ইসমাইল (আ:) এর পরিবর্তে দুইটা দুম্বা কুরবানি করা হয়।

রমজান মাস রোজা/ সিয়মঃ রমজান মাস মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাসে আমাদের পবিত্র মাস, এটি আত্মনিয়ন্ত্রণ, আত্মশুদ্ধি ও নৈকট্য লাভের মাস। রমজান মাসে আমাদের পবিত্র কুরআন নাজিল হয়।রোজা আমাদের সকল খারাপ কাজ হতে বিরত থাকতে সাহায্য করে। রমজান মাসে শেষ ১০দিন অতি তাৎপর্য লাইলাতুল কদরের রাত, এ রাতে ইবাদতের ফযীলত অনেক। পবিত্র কুরআন এ আছে রমজান মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয় ও জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয় । রমজান মাসে আমাদের গুনাহ মাফ পাওয়ার সুর্বন সুযোগ।

ইসলাম ও সামাজিক নৈতিকতা

ইসলামে মানবাধিকার হলো মৌলিক অধিকার ও ন্যায়বিচার হলো সঠিক আইন প্রয়োগ করে সুবিচার করা। মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার সমাজের অপরিহার্য স্তম্ভ। ইসলামে বলা আছে মানুষের অধিকার, ন্যায়বিচার করতে গিয়ে যদি আত্মীয় স্বজন দের বিরুদ্ধে যেতে হয় তবুও মানুষের প্রতি সঠিক বিচার ও তাদের ন্যয্য অধিকার তাদেরকে দিতে হবে। মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার এর মধ্যে বেশি গুরুত্ব ন্যায়বিচার কারণ সঠিক ন্যায়বিচার না করলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে।

ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবার গঠনের মূল হলো বিয়ে। বিয়ের মাধ্যমে স্বামী -স্ত্রী স্নেহ ভালবাসা, সহানুভূতি ভিত্তি গড়ে ওঠে। বিয়ের মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক গভীর হয় এবং সমাজে সামাজিক শান্তি, সামাজিক মূল্যবোধ ও ইনসাফ পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। ইসলাম পরিবার হতে সম্মান, দায়িত্ববোধ, ভালোবাসা শেখায় যা সমাজে কল্যাণকর , ন্যায়ভিত্তিক শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলে। ইসলামীক আদর্শে পারিবারিক কাঠামোর মাধ্যমে সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গঠিত হবে।

আধুনিক জীবনে ইসলামের প্রাসঙ্গিকতা

শান্তি ও সাম্যের ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের একটি মূলস্তম্ভ, শান্তি হ্রদয়কে কোমলিতো করে। নিজের ভিতরে থাকা হিংসা বিদ্বেষ দূর করে। সাম্য হলো সমান অধিকার। নারী পুরুষের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার। সমাজ, রাষ্ট গঠনে শান্তি ও সাম্যের গুরুত্ব অপরিসীম।

আধুনিক প্রযুক্তি ও টেকনোলজি ব্যবহার করে মানবজাতির কল্যান করা ইসলাম সমর্থন করে। সেই মধ্য যুগ থেকে (আল -খারাজমি, ইবনে সিনা,আল-হায়থম) গণিত, জ্যোতিবিজ্ঞান ও চিকিৎসা সকল ক্ষেত্রে অবদান রাখে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার করতে পারি। সঠিক ভাবে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা ইসলাম শুরু থেকে সমর্থন করে আসছে।

উপসংহার

ইসলাম এমন একটি ধর্ম যার মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করলে নৈতিকতার, মানবিকতা, সামাজিক ভাবে সুবিচার করে বর্তমান ও আধুনিক সমাজে।
আশা করি এই লেখাটি আপনার ইসলামিক জীবনধারা গঠনের উপায় পরিষ্কার করেছে। আপনি যদি এ ধরনের আরও তথ্যবহুল ও গবেষণামূলক আর্টিকেল পেতে চান, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্রিল্যান্সিং এক্সপ্রেস ইন্সটিটিউটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url