স্ট্রেস কমানোর ঘরোয়া উপায় ও সুস্থ জীবনযাপনের কৌশল

আপনি কি মানসিক চাপ থেকে মুক্তির সহজ উপায় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কেননা আজকের লেখায় চিন্তা ও টেনশন কমানোর প্রাকৃতিক কৌশল ও সুস্থ অভ্যাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে। তাই চাপমুক্ত থাকতে চাইলে কী করবেন— জানতে হলে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
যোগব্যায়াম ও ঘরোয়া অভ্যাসের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানোর দৃশ্য
নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে কীভাবে সহজ অভ্যাসে মানসিক চাপ কমানো যায়। যেখান থেকে আপনি খুব সহজেই স্ট্রেস কমানোর কার্যকর ঘরোয়া উপায় ও জীবনযাপন পদ্ধতি জানতে পারবেন। তাই দেরি না করে স্ট্রেস কমানোর কার্যকর ঘরোয়া উপায় ও জীবনযাপন পদ্ধতি সম্পর্কে জেনে নিন।

স্ট্রেস কি এবং কেন হয়?

আমরা যখন অনেক ধরনের সমস্যা যেমন: কোনো কিছু চ্যালেন্জ বা কোনো চাপের মাঝে থাকি এবং শরীর ও মনের উপর প্রভাব পড়ে তখন তাকে স্ট্রেস বলে।অর্থাৎ মানুষের নিজের ভিতরে চাপ পড়লে যে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় সেটাই স্ট্রেস। স্ট্রেস সমস্যা টি শারীরিক, মানসিক বা আবেগজনিত ইত্যাদি কারণে মানুষের শরীরে হতে থাকে।স্ট্রেস হওয়ার জন্য অতিরিক্ত কাজের প্রেসার, ব্যক্তিগত সমস্যা এবং আবেগজনিত কারণ অনেকাংশে দায়ী। যখন আমাদের উপর অতিরিক্ত কাজের চাপ, ব্যক্তিগত সমস্যা বা আশঙ্কা তৈরি হয়, তখন আমরা স্ট্রেস অনুভব করি।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটা সাধারণ সমস্যা হলো স্ট্রেস বা মানসিক সমস্যা। আধুনিক যুগে এসে প্রত্যেক মানুষের নানাবিধ কাজের চাপের কারনে মানুষ নিজের শরীরে মানসিক চাপের মাঝে থাকেন। শরীর ও মনের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব আনার জন্য স্ট্রেস আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে কোনো ব্যক্তি স্ট্রেস বা মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে তার শরীর ও মনের অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক টা বেড়ে যায়। স্ট্রেস বৃদ্ধির আরেকটা প্রধান কারণ হলো ঘুমের ঘাটতি।মানুষের শরীরে স্ট্রেস বৃদ্ধির জন্য হাইপারটেনশন এবং বিষণ্নতা অনেক অংশে দায়ী। সুস্থ জীবন যাপনের জন্য স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে আনা অনেক জরুরি। নিয়ম অনুযায়ী খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম গ্রহণ করলে মানসিক চাপ থেকে বের হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্ট্রেস হওয়ার অনেক গুলো কারণ রয়েছে তার মধ্যে চাকরি বা পড়াশোনার চাপ এটা একটা প্রধান কারণ। মানুষ যখন চাকরির সন্ধানে বের হয় তখন তার মানসিকতার উপর অনেক চাপের সৃষ্টি হয়।অন্যদিকে রয়েছে পড়াশোনা, পড়াশোনার চাপ ও একটা শিক্ষার্থীর জীবনে অনেক বেশি। পরীক্ষা নিয়ে চিন্তার কারণে অনেকের শরীরে স্ট্রেস এর প্রভাব পড়ে। পরিবারে ঝগড়া হওয়া,কোনো সুন্দর সম্পর্ক বিচ্ছেদ হওয়া এবং কোনো কিছুর অভাব দেখা দিলে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস এর সৃষ্টি হয়। টাকার অভাব অতিরিক্ত ঋণ এবং অর্থনৈতিক সচ্ছলতা না থাকলে পরিবারের সদস্যদের মাঝে স্ট্রেস তৈরি হয়।

স্ট্রেসের প্রধান লক্ষণ ও প্রভাব:

মনোসংযোগে দুর্বলতা মানসিক চাপের প্রধান লক্ষ্যণ। এ ধরনের সমস্যা মানুষের ভিতরে থাকলে সেই ব্যক্তিরঃ
  •  কোনো কাজে মন বসে না।
  • কোনো কিছু মনে রাখতে পারে না।
  • ভুল করে এক কথা বার বার বলে।
  • রাতে বা দিনে ভালো ঘুম না হওয়া।
  • বেশির ভাগ সময়ে মেজাজ গরম থাকা।
  • অল্পতেই বেশি রেগে যাওয়া।
  • অতিরিক্ত চিন্তা করা এবং নিজের ভিতরে ভয় অনুভব করা।
  • অনেকের বেশি খেতে ইচ্ছে করে আর অনেকের খাওয়ার প্রতি আকর্ষণ কমে যায়। 
  • জোরে কথা বললে বুক ধড়ফড় করা এবং অল্পতেই মাথাব্যথা শুরু হওয়া। 
  • অনেকের খাবার খেলে হজমে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
  • মানসিক চাপে আক্রান্ত ব্যক্তি একা থাকতে পছন্দ করেন।
  • এই সমস্যার আক্রান্ত মানুষের শরীরে ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • অনেকে ডিপ্রেশন এ চলে যায়।
  • মানসিক চাপে আক্রান্ত হলে সন্দেহ বাড়ে এবং ভালো ভালো সম্পর্কের মাঝে দুরত্বের সৃষ্টি হয়।
  • কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যায়।
  • কোনো কিছু রোপণ করলে উৎপাদন কম হয়।
অনেকে এই চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ধুম পানের পথ বেছে নেয় এবং মাদকে আসক্ত হয়ে যায়। যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর। নিজের প্রতি বিশ্বাস কমে যায়। নিজেকে ছোট মনে হয়। সব সময় নিজের ভিতরে হতাশা কাজ করে।

ঘরোয়া উপায়ে স্ট্রেস কমানোর কার্যকর পদ্ধতি:

শারীরিক সুস্থতা এবং মনের শান্তির জন্য যোগব্যায়াম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাড়াসন মানবদেহের মেরুদণ্ড সোজা করে দেয় এবং দেহের স্বাভাবিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। কোবরা ভঙ্গি ব্যায়াম করলে কোমর ও পেটের পেশি অনেক শক্তিশালী হয় যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। কিছু সময় ধ্যান ধরে বসে থাকা শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলনের জন্য অনেক দরকারী।

মৃতদেহের মতো ভঙ্গিতে থাকলে মানসিক চাপ কমানো যায়। এই ভঙ্গিতে থাকলে শরীর ও মন সম্পূর্ণ ভাবে বিশ্রাম নেয়। ঘরে বসে ব্যায়াম করলে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। ব্যায়ামের কারণে ক্যালোরি ঝড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন নিম্ন ৫-৬মিনিট স্কোয়াট ব্যায়াম করতে হবে। স্কোয়াট ব্যায়ামের মাধ্যমে পায়ের পেশি অনেক শক্তিশালী হয়। বুক,হাত ও কাঁধের পেশি শক্ত করার জন্য পুশ-আপ ব্যায়াম করা উচিত।স্ট্রেচিং ব্যায়াম করে শরীরের জড়তা দূর করা যায়।নিজের বাসায় সিঁড়ি থাকলে উঠা নামা করতে হবে তাহলে সহজেই আরেকটা ব্যায়াম হয়ে যাবে।

জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন করে স্ট্রেস কমানো:

বর্তমান সময়ে স্ট্রেস একটা স্বাভাবিক সমস্যা। স্ট্রেস কমানোর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঘুম। পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে স্ট্রেস কমানো যায়। প্রত্যেক মানুষের প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। চর্বি জাতীয় খাবার কম খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। শাক-সবজি ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।খাবারের তালিকা অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে প্রতিদিন নিম্ন ২০-৩০ মিনিট হাঁটতে হবে। নিজেকে কাজের মাধ্যমে ব্যস্ত রাখতে হবে।গল্পের বই পড়তে হবে। পছন্দের গান শুনতে হবে। মাঝে মাঝে ঘুরতে যেতে হবে।

বিশেষ ঘরোয়া টিপস ও অভ্যাস:

শ্বাস-প্রশ্বাসের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দিনে ৭-৯ বার ধীরে ধীরে গভীর ভাবে শ্বাস নিন। আস্তে আস্তে জোরে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে হবে।খোলা মেলা পরিবেশে অর্থাৎ পুকুরে গোসল করতে হবে উষ্ণ পানিতে। তাহলে শরীরে আরাম বোধ হবে এবং টেনশন দূর হবে। তুলসি চা পান করতে হবে কারণ এই চা মানসিক প্রশান্তি দেয়। নিজের পছন্দের সকল কাজ করতে হবে। মনকে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ঘুমের অভ্যাস ঠিক রাখতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে তাহলে শরীর ও মন সুস্থ থাকে।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত?

যখন ঘুমের সমস্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে। ঘুম ভালো একটা হবে না। হঠাৎ করে রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও ভয় হলে এবং নিজের ভিতরে একাকিত্ব অনুভব হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। মানসিক চাপে পড়লে ক্ষুধা কমে যায় আবার অনেকের অতিরিক্ত বেড়ে যায়। সব সময় মন খারাপ করে থাকা এবং নিজেকে আলাদা রাখার ইচ্ছে হলে এটা একটা বিপদ সংকেত। শ্বাসকষ্টের সমস্যা হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

উপসংহার

নিয়মিত ঘুম, ব্যায়াম, যোগব্যায়াম, এবং শাক-সবজি এবং পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ করতে হবে। স্ট্রেস থেকে বের হওয়ার জন্য নিজেকে সময় দিতে হবে। মানুষের মাঝে থাকতে হবে। পছন্দের কাজ গুলো করতে হবে। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। সবুজ সবজি খেতে হবে। দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে। মানসিক চাপে পড়লে ক্ষুধা কমে যায় আবার অনেকের ক্ষেত্রে বেড়ে যায় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সেটা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে। বিকালে হাঁটতে হবে। মাঝে মাঝে ঘুরতে যেতে হবে। পছন্দের গান ও গজল শুনতে হবে। আর বেশি সমস্যার সৃষ্টি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
আশা করি এই লেখাটি আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে এবং সুস্থ জীবনধারা গঠনের উপায় পরিষ্কার করেছে। আপনি যদি এ ধরনের আরও তথ্যবহুল ও গবেষণামূলক আর্টিকেল পেতে চান, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্রিল্যান্সিং এক্সপ্রেস ইন্সটিটিউটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url