গ্রিন টি: ওজন কমাতে ১০টি উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
আপনি কি জানতে চান কীভাবে গ্রিন টি ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং এর উপকারিতা কী? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কেননা আজকের আর্টিকেলটিতে গ্রিন টি খেলে কিভাবে ওজন কমে সে সম্পর্ককে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাই সবুজ চা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারী দিক সম্পর্কে জানতে হলে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
নিচে আপনাদের জন্য ওজন কমাতে এই চা কিভাবে কাজ করে বা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যেখান থেকে আপনি খুব সহজেই বাতের ব্যথা থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া সহজ ও নিরাপদ চিকিৎসা জানতে পারবেন। তাই দেরি না করে ওজন কমাতে ১০টি সুবিধা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন।
ভূমিকা
গ্রিন টি হলো এক বিশেষ ধরনের চা। এটি (Camellia sinensis) নামক বিশেষ উদ্ভিদ থেকে তৈরি করা হয়। এটি একটি বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে তৈরী করা হয়, যেখানে পাতাগুলিকে জারন (oxidation) হওয়া থেকে রক্ষা করে।
উপাদান
- ক্যাটেচিন হলো এক ধরনের পলিফেনল। এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর স্বরূপ বৈশিষ্ট্য ধারণ করে থাকে।
- উদ্দীপক যা সতর্কতা বাড়াতে সাহায্য করে ক্যাফেইন, তবে অন্যান্য চায়ের তুলনায় সবুচ এই চা-তে ক্যাফেইনের পরিমাণ কম থাকে।
- এই চা-তে কিছু পরিমাণে অ্যামিনো অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা শরীরের জন্য উপকারী।
- বিশেষ কিছু উপাদান যেমন ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (B1, B2), ভিটামিন সি থাকে। এছাড়াও বিশেষ খনিজ পদার্থ রয়েছে যেমন ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়াম, জিঙ্ক ইত্যাদি।
বিপাক হার বাড়ায়
বিপাক হার (Boosts Metabolism) বাড়ানোর জন্য
এতে থাকে ক্যাটেচিন এবং ক্যাফেইন যা শরীরের ক্যালরি বার্নের হার বাড়াতে সাহায্য করে।
ক্যাটেচিনঃ EGCG (epigallocatechin gallate) হলো এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যাে এটিতে পাওয়া যায় এটি শরীরের মধ্যে বিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করে থাকে। ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং বেশি ক্যালোরি পোড়ে, যার ফলে শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
ক্যাফেইনঃ একটি প্রাকৃতিক উদ্দীপক যা ক্যাফেইন এটি শরীরের বিপাক ক্রিয়াকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ।
থার্মোজেনেসিসঃ শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে একটি প্রক্রিয়া হলে থার্মোজেনেসিস এবং শরীরের ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে। ক্যাটেচিন এবং ক্যাফেইন একত্রে কাজ করে শরীরের বিপাক হার বাড়ায় এবং শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
ফ্যাট অক্সিডেশন বাড়ায়
শরীরের ভিতরে বিপাকক্রিয়া বাড়াতে এবং চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে।
ক্যাটেচিনঃ ক্যাটেচিন শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্যাট থাকায় অক্সিডেশন প্রক্রিয়াকে বৃদ্ধি করতে পারে।বিশেষ করে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে, তার সাথে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
ক্যাফেইনঃ স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপ্ত করতে একটি উপাদান যেমন ক্যাফেইন কাজ করে এবং শরীরের বিপাকক্রিয়া শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। শরীরের ভিতরে শক্তি ব্যয় বৃদ্ধি করে, যা অতিরিক্ত ফ্যাট অক্সিডেশনকে উৎসাহিত করে থাকে।ক্যাফেইন এবং ক্যাটেচিনের সংমিশ্রণ কাজ করে থাকে এবং ব্যায়ামের সময় শরীরের ফ্যাট বার্ন করার ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে ।
চর্বি সহজে গলাতে সাহায্য করে এবং পেট ও কোমরের ফ্যাট কমায়।
ক্ষুধা কমায়
ক্যাটেচিন এবং ক্যাফেইন থাকে যা ক্ষুধা কমায় এবং শরীরের বিপাক ক্রিয়া বাড়ায়। শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করে। রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে এবং ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। ক্যাটেচিন এবং ক্যাফেইন থাকে, শরীরের বিপাকক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে শরীরের ক্যালোরি দ্রুত বার্ন হয় এবং শরীরের ক্ষুধা কমায়। শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে, ফলে মানুষ সক্রিয় থাকে এবং বেশি ক্যালোরি বার্ন করতে পারে । পরোক্ষভাবে এটি ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়
গ্রিন টি-তে একটি উপাদান হলো EGCG ইনসুলিন যা রেজিস্ট্যান্স কমায় এবং সংবেদনশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করে ইনসুলিন। গ্লুকোজ বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে, এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। বিপাকক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে। ওজন নিয়ন্ত্রণ ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
এই চা নিয়মিত পান করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষ করে খাবারের পরে পান করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
ডিটক্সিফাই করে
শরীরকে বিষমুক্ত করার মাধ্যম হলো ডিটক্সিফাই প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকর পদার্থ দূর করা হয়। ডিটক্সিফাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেমন শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, যেমন- লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন EGCG (Epigallocatechin gallate) উপাদানগুলো হজম এবং কার্যকরভাবে খাবার প্রক্রিয়াকরণে সহায়তা করে, যা অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয় লিভার পরিষ্কার রাখে।
জল ধরে রাখার প্রবণতা কমায়
শরীরে জল ধরে রাখতে সাহায্য করতে পারে না, বরং এটি একটি মূত্রবর্ধক (Diuretic) হিসেবে কাজ করে এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বের করে দিতে সাহায্য করে। ক্যাফেইন শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- মূত্রবর্ধক প্রভাব: ক্যাফেইন একটি হালকা মূত্রবর্ধক, যা শরীর থেকে অতিরিক্ত জল ও লবণ বের করতে সহায়তা করে।
- জলীয় ভারসাম্য: মূত্রবর্ধক হলেও শরীরের জলের অভাব তৈরি করে না, বরং ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। পেট ফাঁপা বা জল জমে থাকা কমে যেতে পারে।
- অন্যান্য উপকারিতা: দিনে ২-৩ কাপ পান করলে জল ধরে রাখার প্রবণতা কমতে পারে। তবে এটি কোনো রোগ নিরাময়ের বিকল্প নয়।
এনার্জি বাড়ায়
গ্রিন টি-তে থাকা ক্যাফেইন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে সতেজ ও সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্কের মনোযোগ বাড়ায় এবং বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধি করে কর্মক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
- ক্যাফেইন: প্রাকৃতিক স্টিমুল্যান্ট হিসেবে ক্যাফেইন মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও মনোযোগ বৃদ্ধি করে। বিপাকক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে শক্তি জোগায়।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: ক্যাটেচিনসহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষকে সুরক্ষা দেয় এবং ব্যায়াম বা চলাফেরায় সহায়তা করে।
স্ট্রেস হরমোন (Cortisol) কমায়
এতে থাকা থায়ানিন নামক উপাদান কর্টিসল হরমোন কমিয়ে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি একটি অ্যান্টি-স্ট্রেস পানীয় হিসেবেও বিবেচিত।
- থায়ানিন: থায়ানিন শরীরে রিল্যাক্সিং প্রভাব ফেলে ও কর্টিসলের মাত্রা কমায়।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: ক্যাটেচিনসহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে কাজ করে ও মানসিক চাপ কমায়।
৯. জলপান বিকল্প
একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প, তবে এটি জল সম্পূর্ণভাবে প্রতিস্থাপন করে না। পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ জল পান করাও জরুরি।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস: কোষ সুরক্ষায় সাহায্য করে ও রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে, ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে ও বার্ধক্য প্রক্রিয়া ধীর করে।
- ক্যালরি কম: সফট ড্রিংকসের তুলনায় কম ক্যালরি প্রদান করে।
চিনির লোভ কমায়
ক্ষুধা ও চিনির প্রতি লোভ কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- ক্ষুধা দমন: এটি খেলে পেট ভরা থাকে এবং মিষ্টি খাবারের ইচ্ছা কমে।
- মেটাবলিজম বৃদ্ধি: ক্যালোরি বার্নে সহায়ক এবং নিয়মিত পান করলে ফ্যাট কমায় ও মিষ্টির প্রতি আকর্ষণ হ্রাস করে।
অতিরিক্ত এই চা পানের অপকারিতা
- ট্যানিনের কারণে অ্যাসিডিটি ও বদহজম হতে পারে।
- বেশি ক্যাফেইনে ঘুমের সমস্যা, উদ্বেগ ও স্নায়ুচাপ বাড়তে পারে।
- খালি পেটে পান করলে আয়রন শোষণে বাধা দিয়ে রক্তাল্পতা তৈরি করতে পারে।
- লিভারে চাপ সৃষ্টি করে ও রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- রক্ত জমাট বাঁধায় সমস্যা হতে পারে।
- হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
- খালি পেটে পেটে ব্যথা হতে পারে।
খাওয়ার সঠিক নিয়ম
- প্রতিদিন ২–৩ কাপ খাওয়া নিরাপদ ও কার্যকর।
- খালি পেটে না খাওয়া – নাস্তার ৩০ মিনিট পরে পান করুন।
- রাতের খাবারের ৩০–৪৫ মিনিট পরে পান করা ভালো।
- লাঞ্চের আগে বা পরে পান করুন, খাবার হজমে সাহায্য করে।
- চিনিহীন পান করাই উত্তম।
- ১ কাপ গরম পানিতে ১ টি টি-ব্যাগ ২–৩ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।
- খাবারের সঙ্গে বা ঠিক পরে না খাওয়াই ভালো – আয়রন শোষণে সমস্যা হতে পারে।
- রাতে দেরিতে না খাওয়া ভালো – ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
- ব্যায়ামের আগে ১ কাপ পান করলে ফ্যাট বার্ন হয়।
- গরম বা কুসুম গরম পান করাই উত্তম।
সতর্কতা
- দিনে ২-৩ কাপের বেশি পান করা উচিত নয়।
- খালি পেটে পান এড়িয়ে চলা উচিত।
- লিভার বা রক্তাল্পতা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন।
- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের পরামর্শ নিয়ে পান করা উচিত।
আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি জানতে পেরেছেন গ্রিন টি কীভাবে ওজন কমাতে সহায়তা করে এবং এর উপকারিতা ও সঠিক খাওয়ার নিয়ম কী। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখতে প্রতিদিনের অভ্যাসে গ্রিন টি অন্তর্ভুক্ত করা একটি কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে। এ ধরনের স্বাস্থ্য ও লাইফস্টাইল সম্পর্কিত আরও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
ফ্রিল্যান্সিং এক্সপ্রেস ইন্সটিটিউটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url